অর্থনীতির গতি বৃদ্ধিসহ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। যদিও বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি পরিবর্তনে বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সম্মেলন থেকে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই)।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট (বিআইপি) শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটি ২৪ জানুয়ারি শুরু হবে। এর মূল আয়োজক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দেশে বিনিয়োগের পোষক কর্তৃপক্ষ বিওআই। আয়োজনের লক্ষ্যের মধ্যে আছে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি-সংক্রান্ত নীতি তুলে ধরা, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও মূল্যসংযোজনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি টেকসই করা। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের শেষ দিনে ঘোষণা দেয়া হবে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের।
সূত্র অনুযায়ী, এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা, সরকারি-বেসরকারিসহ প্রায় আড়াই হাজার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে রোববার পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে ১১০ বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ ২০টিরও বেশি দেশের বিনিয়োগকারীরা নিবন্ধনের মাধ্যমে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ সম্মেলনের শেষ দিনে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ ঘোষণা দেয়া হবে। এর মধ্যে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা আছে ২০০ কোটি ডলারের, যার মধ্যে একটি বিদ্যুৎ খাতের। সম্মেলনে বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ভারতের আদানি ও রিলায়েন্স গ্রুপ। আদানি গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। এছাড়া রিলায়েন্স ইন্টাস্ট্রিজ লিমিডেটের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল ধিরুভাই আম্বানিরও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া রবি আজিয়াটার চেয়ারম্যানেরও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিওআই পরিচালক ও সম্মেলনের সমন্বয়কারী তৌহিদুর রহমান খান বলেন, ভারতের আদানি, রিলায়েন্সসহ চীন, মালয়েশিয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। ২০০ কোটি ডলারের প্রকল্পসহ বেশকিছু বিনিয়োগের ঘোষণা এ সম্মেলনে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা আসবে সম্মেলন থেকে। বিনিয়োগের জন্য কোনো নির্দিষ্ট খাত নয়, সার্বিকভাবে দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরাই হবে এ সম্মেলনের লক্ষ্য।
জানা গেছে, গত বছরও ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে বিওআই। সেখানে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা এসেছিল।
বিওআই সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো দাননির্ভরতা কমিয়ে বাণিজ্যনির্ভরশীল হচ্ছে। বাংলাদেশও বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান বাংলাদেশ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। আর বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক বছর ধরে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। বেসরকারি খাতের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সময় নানা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এসব নীতির সমন্বিত বাস্তবায়ন না হওয়ায় উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ মনোভাব তৈরি করছে।
দেশে বিনিয়োগের এ স্থবিরতা কেবল আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বাধাগ্রস্ত করবে না, সরকারের নেয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনও ব্যাহত করবে। বিনিয়োগ পরিবেশ বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিআইপি সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।
বিওআইয়ের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বিআইপি সামিট মূলত ‘বাংলাদেশ সামিট’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাবে। বিশ্বের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ও ব্র্যান্ডগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এছাড়া বিওআইয়ের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের সুযোগও রাখা হয়েছে। এ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ছাড়াও গবেষক, শিক্ষাবিদ, শিল্প ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেবেন।
সানবিডি/ঢাকা/আহো