পুঁজিবাজারের বিশেষ ফান্ড গঠন চলতি মাসেই

:: আপডেট: ২০২১-০৭-০৭ ১১:০২:২৬


নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এগিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নকে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর শিবলী কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এই ফান্ড গঠন করা হবে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd Newsক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

সূত্র মতে, ইতোমধ্যে পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় এই হিসাব খোলা হয়েছে। এই হিসাবে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান, স্টক ব্রোকার এবং স্টেক ডিলারের কাছে থাকা ফান্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির সকল অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।

তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার প্রদান বা ধার গ্রহণ করা হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা একটি ফান্ড গঠন করতে চাই। এই ফান্ডের টাকা আসবে অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার। আশা করছি এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা যাবে।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। সেখানে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিষ্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. কাউসার আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

এর পর বিএসইসির নিয়মিত ৭৭২তম কমিশন সভায় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এর আগে আইনটি করার জন্য জনমত যাচাই করা হয়েছে। পরে গত ২৭ জুন  গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গতকাল ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ফান্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত ১৩০ কোম্পানির কাছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি নগদ লভ্যাংশ পড়ে ছিল। এর মধ্যে ২০ থেকে ১০০ কোটি টাকা ছিল ২০টির অধিক কোম্পানিতে। এ হিসাবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের কাছে সর্বাধিক ১৯০ কোটি টাকার অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত এ কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ রয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নভেম্বরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ ছিল আইসিবির কাছে।

ফান্ডের বোর্ড:

পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে এই ফান্ড গঠন করা হয়। তহবিলটি ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস থাকবে। যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও ৩ জন সদস্য থাকবেন, যারা বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত হবে। এছাড়াও বোর্ড অব গভর্নসে বিএসইসি থেকে ৪ জন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) থেকে একজন করে মনোনীত সদস্য থাকবেন। আর একজন প্রফেশনার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস বা কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস বা চার্টার্ড সেক্রেটারি বা চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট এবং একজন চিফ অব অপারেশন (সিওও) থাকবেন।