আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষের যাত্রায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্স

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২১-০৭-১২ ০৬:৪৯:৩০


পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের দায়িত্ব নিয়েছেন এই খাতের সবচেয়ে কম বয়সী ও তরুণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। তরুণ হলেও তার কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের। তিনি ১৫ বছর আগে দেশের অন্যতম এনবিএফআই ডেলটা ব্র্যাকের (ডিবিএইচ) মাধ্যমে আর্থিক খাতে যাত্রা শুরু করেন। একে একে কাজ করেছেন দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি, আইপিডিসিতে। কাজ করেছেন এসএমই খাতের নেতা ব্র্যাক ব্যাংকেও। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে যোগ দেওয়ার আগে দায়িত্ব পালন করেছেন আইপিডিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে।

গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনার মধ্যে সারাদেশে চষে বেরিয়েছেন মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। তার আশা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে প্রথম তিনটির একটি বানানো। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। গুছাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সব জায়গা। তার ইচ্ছা হলো এক ছাতার নিচে পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের সকল সেবা দিবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। তার সাথে কথা বলেছেন দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম নিউজ পোর্টাল সানবিডির প্রধান প্রতিবেদক গিয়াস উদ্দিন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষের যাত্রায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি। তার কথার চুম্বক অংশটুকু পাঠক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তুলে ধরা হলো।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর

মোহাম্মদ কায়সার হামিদ বলেন,গত তিন চার বছর ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চরম আস্থার সঙ্কটে ভুগছে। বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা চলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। সেটার মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটা বড় ধরনের গ্যাপ বা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। যেহেতু আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করেছি এবং আমার চাকুরি জীবনের অল্প কিছু সময় বাদ দিলে বাকি সময়টা আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে তিনটি শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেখানে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কোন পণ্য বা বৈচিত্র্যময় কোন পণ্য বা সেবা নেই। এমন কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন, যেখানে ব্যাংকগুলো করে না। সেগুলো করতে হলে আমাদের মানুষের কাছাকাছি যাওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

গ্রাহকদের টাকার দায়িত্ব ক্লিয়ারিং ব্যাংকে দেওয়ার প্রস্তাব চীনের

মিডওয়েসহ সাত ব্রোকারেজের কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি

পুঁজিবাজারের বিশেষ ফান্ড গঠন চলতি মাসেই

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে আর্থিক খাতের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হলো আস্থার। এই সংকট কাটাতে হলে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো বা কাছাকাছি যাওয়ার বিকল্প নেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ একটি ব্যাংক ডিপেন্ডেড বিজনেস মডেল তৈরি করেছিল। ২০১৮-১৯ সালে দেখেছি ব্যাংকগুলো সাপোর্ট উঠিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। তার মানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দরকার হচ্ছে ব্যাংক ডিপেন্ডেন্সি থেকে বের হয়ে অল্টারনেটিভ সোর্স অফ ফান্ডের জায়গা তৈরি করা। গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা তৈরি করা। এই কাজগুলোই আমরা শুরু করেছি।

মোহাম্মদ কায়সার হামিদ বলেন, চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষ বন্ধি। সেখানে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে যোগ্যতাসম্পূর্ণ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তারা নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করছে। একই সাথে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সব কিছুতে সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ বাড়ানোর কাজ চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী কারার জন্য ২০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করছি। এই বন্ড আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনেক প্রয়োজন। আমরা ফরেন ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশের প্রোক্ষাপটে এগুলো অনেক জরুরি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান জন্য আরও বেশি জরুরী। গত ১০ মাসে আমরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ কমিয়েছি। এক সময় ব্যাংকের উপর আমাদের ৬০ শতাংশ নির্ভরশীলতা ছিলো। আর ৪০ শতাংশ ছিলো নিজস্ব ফান্ড। বর্তমানে এর চিত্র পুরো উল্টো। বর্তমানে ৫০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ ও ৫০ শতাংশ নিজস্ব ফান্ড। এর ব্যবধান আরও কমাতে কাজ করছি।

তরুণ এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সানবিডিকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে যেই ধরণের পণ্য নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া প্রয়োজন; ঠিক সেই ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে আমরা ‘সুরক্ষা’ নামের একটি পণ্য নিয়ে কাজ করছি। এই পণ্যের মাধ্যমে একজন গ্রাহক আমাদের কাছে আমানত রাখলে তার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেই ধরণে সেবা প্রয়োজন সব দিয়ে যাচ্ছি। যেমন- ডাক্তারি পরামর্শ,হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা এবং বীমা সুবিধা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন সবচেয়ে কম সুদ হার। ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের যেই সুদ দেয় তা খুবই কম। তিন থেকে পাঁচ শতাংশের নিচে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেখানে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এক দেড় শতাংশ বেশি পায়। সুরক্ষা অ্যাপস এবং সেফটি বা অন্যান্য সুবিধাগুলো যোগ করেলে কিন্তু এটা এই সময়ের জন্য গ্রাহকদের জন্য অনেক ভালো সুযোগ।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো-বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠান দুটির সেবা সহজ করার জন্য আমরা কাজ করছি। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল সেবা যাতে খুব সহজে গ্রাহকরা পায়।

করোনার মধ্যে দেশের সকল প্রান্তে মানুষকে সেবা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনার মধ্যে যেই ধরণের সেবা নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো; আমাদের পরিচালনা পর্ষদ সেই সহযোগিতাই করেছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্স একটি রোড ম্যাপ তৈরি করেছে। সেই রোড ম্যাপ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সব দিক থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে।

 

নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিডি ফাইন্যান্স থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নামের থেকে আর কী নাম হতে পারে। যেটা নিয়ে আমরা মানুষের কাছে যেতে পারবো? অন্যদিকে আমাদের দেশের একটি বড় অংশ ইসলামিক পণ্যে বিনিয়োগ করতে চায়। তাদের জন্য আমরা ইসলামিক শরিয়াহ শাখা খুলছি। আমরা ব্রান্ড বিল্ডিং এবং ইমেজ বিল্ডিং এ অনেক সময় দিচ্ছি। যাতে আমরা আমাদের কোম্পানির সুনাম আরও বৃদ্ধি করতে পারি।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স নামে কবে থেকে যাত্রা শুরু করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আইনগতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে। আর ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আমরা আমাদের কাজগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। করোনার কারণে একটু সময় নিচ্ছি। অবস্থা ভালো হলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নতুন নাম,নতুন বার্তা, নতুন পণ্য নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাবো।

বিদেশি ঋণ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আগামী পর্বে।