প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষককে ক্ষতির থেকে বাঁচাতে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক’র (এডিবি) সহায়তায় শস্য বীমা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি)’কে। তিন বছরের এ প্রকল্পের আড়াই বছর শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের সিংহভাগ কাজ বাকী রয়েছে। ১২ হাজার কৃষককে এ শম্য বীমার আওতায় নিয়ে আসার কথা থাকলেও মাত্র ১৬৫ কৃষককে বীমার আওতায় আনা হয়েছে। আর প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগই খরচ হচ্ছে আনুসাঙ্গিক কাজে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি রির্পোটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, তিন বছর মেয়াদি ২১ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার টাকার এ পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। সে হিসাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় আছে মাত্র ৫ মাস। অর্থাৎ প্রকল্পের মেয়াদ এরইমধ্যে আড়াই বছর শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১৬৫ জন কৃষককে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হযেছে। প্রকল্পের টাকা ব্যয় হয়েছে অফিস ভাড়া, কনসালটেন্ট নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ। এ হিসাবে প্রকল্পটিতে যে ব্যয় করা হয়েছে তার ৯৯.৯৮ শতাংশই খরচ করা হয়েছে প্রকল্পের আনুসঙ্গিক ব্যয় বাবদ। আর প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ ফসলের ক্ষয় ক্ষতি বাবদ কৃষককে দেয়া হয়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালকের দাবী, এ প্রজেক্টের টাকা কৃষকের ভর্ভুকির জন্য নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য্। কৃষক বীমা করবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে এবং বীমা দাবী দিবে সাধারণ বীমা।
এদিকে ৩ বছর মেয়াদী প্রকল্পের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ২ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। ফলে মেয়াদ শেষে প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে শস্য বীমার এ কর্মসূচি নেয়া হয় দেশের ৩টি জেলায়। জেলাগুলোর হলো- রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালি। মোট ১২ হাজার কৃষককে শস্য বীমার সুবিধা দিতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় ২০০ বিঘা জমির অনুকুলে ১৬৫টি পলিসি করে। এতে কৃষকদের কাছ থেকে মোট প্রিমিয়াম নেয়া হয় ১৭ হাজার ৩৯০ টাকা । এর মধ্যে বিঘা প্রতি প্রিমিয়াম ৮৭ টাকা । এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হয় ১৩ টাকা । অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমির বিপরীতে কৃষকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নেয়া হয় ১০০ টাকা। আর দাবি পরিশোধ করা হয় বিঘা প্রতি ১৪৭ টাকা করে ২৯ হাজার ৪ শত টাকা। এসব পলিসি করা হয় আমন মৌসুমে। আমন মৌসুমে খরার ক্ষতিপূরণে কৃষককে বীমা সুবিধা দেয়া হয়। প্রকল্পের কর্মসূচি অনুসারে ২০টি আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপনের কথা থাকলেও আড়াই বছরে তার একটিও স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া ৬ হাজার কৃষককে শস্য বীমা সম্পর্কে অবহিত করা, বীমা প্রতিষ্ঠান, আইডিআরএ, আবহাওয়া অধিদফতর, এনজিওসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ৪০০ কর্মকর্তাকে শস্য বীমার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচি থাকলেও তার ৯০ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ১৫ জন কর্মকর্তাকে শস্য বীমা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাধারণ বীমা করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক ওয়াসিফুল হক আজকালেল খবরকে বলেন, বাংলাদেশের জন্য শস্য বীমা প্রকল্পটি একেবারেই নতুন। কাগজে কলমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৩ সালে জুন থেকে শুরু হলেও ইটিপি সংশোধনে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় এর ৮ মাস পরে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। এরপরই প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আবহাওয়া কেন্দ্রগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হবে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছো। আমরা আশা করছি আরো ৬ মাস মেয়াদ বাড়বে। বাকি সময়ের মধ্য প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
এখানে উল্লেখ্য, এর আগে সরকারের সহায়তায় (১৯৭৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত) আরও দু’বার এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হয় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালে শস্যবীমা চালু হয়। এটি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এ সময় ২৩ হাজার ৭৯৪ একর জমিতে ১৮ হাজার ৭৮২ জনকৃষকের মোট দুই হাজার ৭৬টি বীমা করানো হয়।
এসব বীমা থেকে প্রিমিয়াম বাবদ সরকারের আয় হয় ৮৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৭ টাকা। তার পরিবর্তে দাবি পরিশোধ করতে হয় ১১ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার ২৭৭ টাকা। এরপর ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে আবার সিলেটের মাধবপুর পাইলট প্রকল্পের নামে ৫০০ একর জমিতে ২৫টি বীমা করার পরিকল্পনা হয়। এ সময় বীমা হয় ১৬টি। টাকার পরিমাণে ৩৮ হাজার ৭২৫ টাকা। তার পরিবর্তে দাবি পূরণ করতে হয় ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে সরকারের এবারের প্রকল্পে ক্ষতি হয়। প্রকল্পটি বর্তমানে অচল রয়েছে।