‘ডিজিটাল বাংলাদেশে জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা’
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৭-২৭ ১৫:১২:৩৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। এটা জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গত ২৩ জুলাই ছিল পাবলিক সার্ভিস দিবস, তবে করোনার কারণে এটির আয়োজন আজ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮১ সালে এসে যখন বার বার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। তখন বার বার আমাকে গ্রেফতার-গৃহবন্দি করা হয়েছে। তখন বাবার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা জয় ও পুতুলকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুল থেকেই জয় কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসতো, কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার শিখেছি। ৯১ সালে যখন পার্টির জন্য অনেক দামে কম্পিউটার কিনি, তখনই আমরা আলোচনা করি, কীভাবে দেশে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করা যায়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, জয় আমাকে পরামর্শ দিলো কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলতে হবে, দাম সস্তা করতে হবে। মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলেই মানুষ এটা শিখবে। সেভাবেই কিন্তু আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করি তখন আমি দেখেছি ৯৬ সালে সরকারে এসে কেউই কম্পিউটার ব্যবহার করে না। টেবিলে একটা ডেক্সটপ রাখা থাকতো মাত্র। অনেকে হাত দিতেই সাহস পেত না। সরকারে আসার পর আমিই প্রথম নির্দেশ দেই প্রত্যেকটা ফাইল আমাকে কম্পিউটারে টাইপ করে আসতে হবে। আমরা সেভাবে দেখতে চাই। এরপরে সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য একটা ন্যাশনাল কমিটি আমি করে দিয়েছিলাম। কিভাবে আমরা এই নতুন প্রযুক্তিটা আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করতে পারি, প্রসার করতে পারি। এগুলি গোছাতে গোছাতে অনেক সময় চলে যায়। তখন কিছু মানুষ এই ৫ বছরে আস্তে আস্তে ব্যবহার করা শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ল্যাপটপ ব্যবহার করা কম্পিউটার ব্যবহার করা আমাদের প্রত্যেকটা অফিসে ততদিনে শুরু হয়ে যায়। এমনকি আমাদের বিদেশি দূতাবাসে ব্যবহার হতো না। আমেরিকায় আমাদের দূতাবাসের যে বিল্ডিংটি আমরা তৈরি করে দিই, সেখানেও কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করতো না। যদি কোন কাজ করতে হতো জয় চাকরি করতো, সেই চাকরি করে এসে সেগুলি টাইপ করে আমাকে ইমেইলে পাঠাতো। আমি এখান থেকে প্রিন্ট আউট করে আমাদের অফিসের হাতে দিতাম যে এটা এভাবে এভাবে করতে হবে। কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমাদের যথেষ্ট এভাবে কাজ করতে হয়েছে, একটা সময়ে।
তিনি বলেন, আমরা আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ধাপে ধাপে কতোগুলি কাজ আমরা করেছি। সবগুলি কিন্তু তার পরামর্শে। কারণ সে কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নেয়। এর পরবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেয়। এরপর হার্ভার্ড থেকে মাস্টার ডিগ্রি নেয়, সেটা ২০০৭ সালে। আমি তখন তাকে ওখানে জোর করে ভর্তি করাই। কিন্তু আমি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারিনি। কারণ আমিই তখন বন্দি হয়ে যাই। কিন্তু সে তখন ওইটা কনটিনিউ করে এবং মাস্টার ডিগ্রিটা পাবলিক সার্ভিসের ওপরেই করে।
তিনি বলেন, ‘আজ তার (জয়ের) জন্মদিন। ৫০ বছর বয়স হলো জয়ের। এই করোনার কারণে আমরা একসাথে হতে পারলাম না, এটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু বলবো যে আজকে যে আমরা বাংলাদেশটাকে ডিজিটাল করতে পেরেছি, প্রযুক্তির শিক্ষাটাকে পপুলার করতে পেরেছি এবং আমাদের যুব সমাজ, তরুণ সমাজ। এই তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা। তরুণ সমাজ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই ভাবে জয়, আমার বোনের ছেলে রেদওয়ান থেকে শুরু করে সবাই কিন্তু সেভাবে কতগুলো উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে। যার ফলটা আজকে বাংলাদেশ ভোগ করছে।
প্রশাসন নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সরকার মানে জনগণের সেবক। সরকারি কর্মকর্তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া যায়, কর্মপরিকল্পনা দেয়া যায়, তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারে সেটাই আজকে প্রমাণিত। তাদের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়া যায়, তাহলেই সব কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব। যাদের মাধ্যমে আমরা কাজ করবো, তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটিও আমরা করেছি।’
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে ভ্যাকসিন দেবো। ইতোমধ্যে অনেক কিনেছি। যত টাকা লাগে আরও কিনবো। ভবিষ্যতে আমরা দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি করবো। ইতোমধ্যে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবার ও তাদের বাড়ির লোকজনকেও দিতে বলেছি।’
এদিন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সভাপতির বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সানবিডি/এএ