বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হলেও এখানে আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ার পেছনে ঘুরেফিরে পুরনো বিষয়গুলোই তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আয়োজিত রোড শোতে ব্যবসায়ী নেতা এ কথা জানান।
উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে, এক জায়গায় গিয়ে সব ধরনের সেবা একসঙ্গে পাওয়া যায় না। সরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের পদে পদে হয়রানি হতে হয়। এতে করে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হন না। কয়েক বছর ধরে বারবার তাগিদ দিয়ে এলেও অবকাঠামো দুর্বলতা এখনো কাটেনি। ব্যাংকঋণের সুদের হারও এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসেনি। সামগ্রিকভাবে দেশে এখনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো বেশ ভালো অবস্থানে থাকার পরও আশানুরূপ বেসরকারি বিনিয়োগ আসছে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। রোড শো অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ইপিজেডের অন্তর্ভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশীয় ও বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএফসি, জাইকা প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ আকর্ষণে বেজা এই রোড শো আয়োজন করে। এর আগে গত মাসে চট্টগ্রামেও রোড শো আয়োজন করেছিল বেজা।
এসময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভৌগোলিক কারণে বিশ্বের অপরাপর দেশের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ জায়গা। এর পরও এখানে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ার পেছনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস না থাকা, অবকাঠামোর দুর্বলতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। এটি করা সম্ভব, যদি বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো জমি। এর পরও বেজা চেষ্টা করছে ভূমির ব্যবস্থা করা। এরই মধ্যে চীন ও জাপানের জন্য জমি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মিরসরাই ও ফেনীতে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি পাওয়া গেছে, যেখানে শিল্প-কারখানা করা যাবে। তিনি বলেন, শুধু জমির ব্যবস্থা করলেই তো হবে না; যাতায়াতব্যবস্থা থাকতে হবে। দেশের কানেক্টিভিটি এখনো উন্নত হয়নি। সে জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং এলজিইডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান পবন চৌধুরী।
বিনিয়োগ না হওয়ার পেছনে ব্র্যান্ডিং বা ইমেজের সংকট রয়েছে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সরকারের এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও বেজার সামনে প্রধান বাধা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেজার আওতাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। বেজার আওতাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নারীদের জন্য আলাদা প্লট থাকবে উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারী উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বেশ ভালো। টাকার মান ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। সুদের হারও কমছে। তবে ব্যবসায়ীদের মনে রাখতে হবে সরকার সুদের হার নির্ধারণ করে না। এটা বাজারের ওপর নির্ভর করে। তবে সরকার পলিসি ঠিক করে দেয়। মাহবুব আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষে বেজাকে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নিতে হবে। এ সময় তিনি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে বেজার কর্মকর্তারা বলেন, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ইতিমধ্যে ৪৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি মিলে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান বেজার কর্মকর্তারা। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে বেজা বিকল্প উপায়ে অর্থ আয়ের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস