খুচরা বাজারে আলুর ভালো দাম থাকলেও দাম কম পাইকারি বাজারে। এতে উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের চেয়ে বস্তাপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু।
এমন পরিস্থিতিতে লাভের আশায় আলু মজুত করে এখন বড় লোকসানের কবলে পড়েছেন মুন্সিগঞ্জের আলুচাষি ও মজুতদাররা। কম দামে আলু বিক্রি করায় অনেকেই হারাচ্ছেন পুঁজি। আগামীতে আলু চাষ করবেন কি না এ নিয়েও শঙ্কায় অনেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সিগঞ্জের ৬ উপজেলায় এবার ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে কৃষকরা জেলার ৭৪টি হিমাগারে সংরক্ষণ করে প্রায় ৫ লাখ ৮০ হাজার টন।
কৃষকরা জানান, পাইকারি বাজারে বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ টাকা কেজি। অথচ আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ মিলেয়ে কেজিপ্রতি খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি চাষিদের লোকসান ৭ থেকে ৯ টাকা। বস্তাপ্রতি লোকসান দাঁড়াচ্ছে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।
এদিকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে তফাৎ ১০-১২ টাকা। মূলত মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
আরেক কৃষক জয়নাল আলম বলেন, এ বছর ভাবছিলাম আমাদের অনেক লাভ হবে। এখনও লাখ টাকা লোকসান। আগামীতে কিভাবে আলু রোপণ করবো, সেটাই বুজতে পারছি না। পাইকারি বাজার থেকে কিনে খুচরা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছে। তারা লাভবান হচ্ছে কৃষকের লোকসান হচ্ছে।
আরশেদ আলী নামের একজন কৃষক জানান, ২১০০ বস্তা আলু রাখছিলাম। এখন বস্তা প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
আরেক কৃষক মহিউদ্দিন বেপারী বলেন, আলু অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে। এজন্য দাম কম বলতাছে। সরকার যদি উদ্যোগ নিয়ে আলু বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিত, তাহলে আলুর দাম বাড়তো। না হলে কৃষকও মরবে, ব্যবসায়ী, কোল্ডস্টোরেজ মালিকরাও মরবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘বর্তমানে কৃষকরা যে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক বলছে তাদের আলু পঁচে যাচ্ছে । কিন্তু আলু উৎপাদন মৌসুমে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়া আলুর যদি বিকল্প ব্যবহার না বাড়ানো যায়, তবে আলুর দাম পড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্যের সঙ্গে আলুকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করা হয় তাহলে কৃষকদের লোকসান এড়ানো যাবে।’
সানবিডি/ এন/আই