করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে সুখবর এসেছে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামকে টপকে গেছে বাংলাদেশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আর্থিকভাবে এর পরিমাণ ৩১৩ কোটি ডলার।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং চীনের বেড়েছে ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অর্থাৎ এ সময়ে পোশাক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ চীন এবং ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ কর্মাসের ‘অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস (ওটেক্সা)-এর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক আমদানির পরিসংখ্যান নিয়ে ওটেক্সা তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
পোশাক মালিকরা একে সুসংবাদ হিসেবে অভিহিতি করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙ্গা হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।
পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভিয়েতনাম।
২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের বিপর্যয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটির আমদানি-রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
ওটেক্সার প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার কারণে ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশক পণ্যের রপ্তানি কমে যায় ৩০ শতাংশ। ওই সময়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি কমে ২০ শতাংশ।
তবে চলতি বছর দেশটিতে ব্যাপকভাবে মানুষকে করোনার টিকা দেয়া শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় ও মানুষের কেনাকাটাও বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে উল্লম্ফন দেখা গেছে, যার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশও।
স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, তাদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের প্রচুর ক্রয়াদেশ (অর্ডার) রয়েছে। ফলে আগামী মাসগুলোতেও ভালো রপ্তানির আশা করছেন তারা।
এবিষয়ে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অনেক দেশ দোকানপাট খুলে দিয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমারে হাতে প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে এবং আরও আদেশ আসছে। আশা করছি আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি বাড়বে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, অন্যান্য বাজারেও রপ্তানি বাড়বে। ঈদ ও লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ না থাকলে জুলাইয়েও পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেত।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘ভিয়েতনাম এখন উচ্চ মূল্যের (হাই ভ্যালু) পোশাক রপ্তানিতে মনোযোগ বেশি দিয়েছে। কম দামে বেসিক পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের বেশির ভাগ পোশাক পণ্য হচ্ছে বেসিক আইটেম। বেসিক আইটেমের দাম কম এবং পরিমাণ বেশি। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে একক দেশে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট পোশাক পণ্য রপ্তানি হয় প্রায় ১৯ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত দেশগুলোতে ৬২ শতাংশ। কানাডা ৩ শতাংশ এবং বাকি অন্যান্য দেশে যায় ১৬ শতাংশ ।
গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের অবদান ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার।
ওটেক্সার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে গেলেও আর্থিক ও পরিমাণগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এখনও তৃতীয় অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। চীন যথারীতি শীর্ষে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ৩ হাজার ৫৩৮ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ৭৩২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে চীন থেকে। ভিয়েতনাম থেকে ৬৮১ কোটি ডলারের এবং বাংলাদেশ থেকে ৩১৩ কোটি ডলারের পোশাক নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এএ