বাণিজ্যমেলায় যে সব পণ্য বিক্রিতে এগিয়ে

আপডেট: ২০১৬-০১-২৪ ২২:২৩:১০


DSC_4357ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে মেলা। ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মেলায় আসছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। বিশেষ অফার কিংবা ছাড়ে পণ্য কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে। ‘মাথা নষ্ট অফার’, জাতীয় অফার কিংবা আখেরি অফারের নামে পণ্যভেদে ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, এবারের মেলায় পাঁচটি পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক, গৃহস্থালী, ইলেকট্রনিক্স, প্রসাধনী ও খাদ্যসামগ্রী। এসব পণ্যের প্রধান ক্রেতাই হচ্ছেন নারী ও তরুণীরা। বিক্রেতারা বলছেন, বিশেষ অফার ও পণ্য ফ্রি থাকায় শেষ সময়ে বিক্রি অনেকাংশেই বেড়েছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক, গৃহস্থালী ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আধিক্য সবচেয়ে বেশি বলে জানান তারা।

গৃহস্থালী ও আসবাবপত্র সামগ্রী : মেলায় গৃহস্থালী পণ্যের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে যেসব ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় আসছেন তাদের অধিকাংশই কিছু না কিছু গৃহস্থালী পণ্য কিনছেন। আর ক্রেতা আকর্ষণে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। যত টাকার পণ্যই কেনা হোক না কেন তাতে অন্তত ৫ থেকে ৪২ শতাংশ ছাড় পাওয়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে থাকছে গিফটের ব্যবস্থাও। ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে মেলায় গৃহস্থালী সামগ্রীর বিভিন্ন স্টলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে নামীদামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নও। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনসহ দিল্লী, কিয়াম, মিয়াকো, নোভাসহ বড় বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে গৃহস্থালী পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা জানান, মেলার শুরুতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে তাদের প্যাভিলিয়ন। ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে এনার্জি সেভিং ও পরিবেশ বান্ধব উচ্চপ্রযুক্তির এলইডি বাল্ব ও সিলড লিড এসিড রিচার্জেবল ব্যাটারি। হট কেকে পরিণত হয়েছে ওয়ালটনের নতুন ডোনাট মেকার, স্যান্ডউইচ মেকার, কেক মেকার ও ট্রাভেল ব্লেন্ডার পণ্যসামগ্রী।

এছাড়া নান্দনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র নিয়ে এসেছে নাভানা, হাতিল, পারটেক্স, আখতার, লিগেসি, নাদিয়া, ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাভিলিয়ন। এসব প্যাভিলিয়নে চেয়ার, খাট, সোফা, ডিভান, সেন্টার টেবিল, বেড ও বেডসাইড টেবিল, ওয়ার্ডরোব, আলমারি, শোকেস, ওপেন শেলফ, বুকশেলফ, টিভি কেবিনেট, মিনি কেবিনেটসহ গৃহস্থালীর হরেক রকমের আসবাবপত্র চাহিদা বেশি। ৫ থেকে ২৫ শতাংশ বিশেষ মূল্যছাড়সহ নানা উপহার দিচ্ছে ফার্নিচারের প্রতিটি স্টল-প্যাভিলিয়ন।
ইলেকট্রনিক্স ও অটোমোবাইলস পণ্য : মেলায় অন্যসব পণ্যের তুলনায় ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা কম নয়। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সঙ্গে অটোমোবাইলস ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে। ক্রেতা টানতে বিভিন্ন পণ্যে রয়েছে নানা ছাড়।

ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন নামীদামী ব্রান্ডের মধ্যে ওয়ালটন, রানার, যমুনা, শার্প, মিনিস্টার, মাইওয়ান, সনি, এলজি প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্যণীয়। বাণিজ্যমেলায় ওয়ালটনের দুটি স্টল ও পাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৪ শতাধিক ইলেকট্রক্সি ও হোম এপ্লায়েন্স পণ্য। এর মধ্যে মেলা উপলক্ষে প্রায় অর্ধ শতাশিক পণ্য নিয়ে এসেছে ওয়ালনট। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ওয়ালটন নতুন নিয়ে এসেছে প্রিমো এনএক্স-৩, প্রিমো আর-৪, প্রিমো ভি-২, প্রিমো জেডএক্স-২, প্রিমো ডি-৭। যার মধ্যে ক্রেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে ৩৫ হাজার ৯৯০ টাকা মূল্যের প্রিমো জেডএক্স-২। যাতে রয়েছে দুই গিগাহার্জ প্রসেসর, ৩-গিগাবাইট র‌্যাম, ৬৪ গিগাবাইট রোম, উচ্চমানের ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফিসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। তিন হাজার ৬৯০ টাকা থেকে ১৬ হাজার ৪৯০ টাকার মধ্যে মিলছে অন্যান্য স্মার্ট ফোন।

যমুনা ইলেক্ট্রনিক্স মেলা উপলক্ষে এলইডি টিভিতে ৪ থেকে ৯ হাজার টাকা ছাড় দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে। এছাড়া সব ধরনের হোম এপ্লায়েন্সের ১০ শতাংশ ছাড় এবং ফ্রিজে রয়েছে ২০ শতাংশ ছাড়। মেলায় অংশ নেয়া যমুনা ইলেক্ট্রনিক্সের সেলস এক্সিকিউটিভ আমির হোসেন বলেন, ছাড় দেয়ার কারণে বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। মেলায় অংশ নেয়া শার্প ইলেক্ট্রনিক্স প্যাভিলিয়ন ২৮এ ২০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছাড় আছে বিভিন্ন পণ্যভেদে। এত রয়েছে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওভেন, বেলেন্ডার, মসক্রটো, আয়রন, এয়ার পিউরিফায়ার ও সাউন্ড সিস্টেম। শার্প ইলেক্ট্রনিক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা ও ক্রেতা-দর্শনার্থী দুটোই বেড়েছে।

প্লাস্টিক পণ্য : বাণিজ্যমেলায় প্লাস্টিকের বাহারি পণ্যের বেচাকেনা বেশ ভাল। অন্য দোকানগুলোর তুলনায় প্লাস্টিক পণ্যের দোকানে সারাদিনই বেশ ভিড়। এবারের বাণিজ্যমেলায় প্লাস্টিকের বাটি, মগ, জগ, চেয়ার, টেবিল, র‌্যাক, টুলসবই পাওয়া যাচ্ছে। প্লাস্টিকের সোফাসেট, ওয়ার্ড ড্রাপ বা খাট সবই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এছাড়া শিশুদের খেলনা অহরহই পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় নামকরা ব্র্যান্ডের প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। মেলায় বেঙ্গল, আরএফএল, পারটেক্স, এনপলি, তানিনসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের স্টলে বাহারি ডিজাইনের পণ্যগুলো ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ করছে। প্রাণ-আরএফএলের প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ডিজাইনের জগ, সবজি কাটা বোর্ড, বিভিন্ন সাইজের বাটি, ফুড বক্স, গামলা, বালতি, ঝুড়ির চাহিদা বেশি।

প্রসাধনী ও খাদ্যসামগ্রী : মেলায় নারী ও তরুণীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে নানা ধরনের গহনা ও প্রসাধনীর স্টলে। ছুটির দিনগুলোতে মেলায় ব্রেসলেট, চুড়ি, রিং, দুল, লকেট, পায়েল, পাঞ্জা, টিকলি, টায়রা প্রভৃতি গহনা কিনতে লক্ষ্যণীয় ভিড় দেখা যায়। এসব গহনার সঙ্গে মিলিয়ে আই পেন্সিল, লাইনার, শেডো, ফেসপাউডার, শাইনার, ফাউন্ডেশন, মাশকারা ও নেইলপলিশসহ বিভিন্ন প্রসাধনী কিনছেন ক্রেতারা বিদেশী স্টলগুলোর মধ্যে চাইনিজ, থাইসহ বিভিন্ন দেশের ফ্যাশনেবল গহনা সহজেই আকৃষ্ট করেছে ক্রেতাদের। আর এসব গহনা স্টলভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রসাধনীর মধ্যে ল্যাকমি, ম্যাক, জর্ডানসহ নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে মেলাতে। লিকুইড বা স্প্রে জাতীয় ফাউন্ডেশন, ফেসপাউডার ও শাইনারও রয়েছে। ধাতব, প্লাস্টিক ও গোল্ড প্রলেপের তৈরি আধুনিক নক্সা ও ডিজাইনের বৈচিত্র্যময় দুল পাওয়া যাচ্ছে। আবার কাপড়, সুতা, পাট ও কাঠের ব্যবহারে দেশীয় ঐতিহ্য তুলে ধরে পসরা সাজিয়েছে কয়েকটি স্টল।

উল্লেখ্য, মাসব্যাপী ২১ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য বা টিকিট মূল্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য থাকছে ২০ টাকা করে।