১২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব
আপডেট: ২০১৬-০১-২৫ ১৩:২৬:১২
‘ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিটে’ বিদেশী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ১২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে দুর্বল অবকাঠামো, গ্যাস সংকট ও যানজটকে বিনিয়োগের অন্তরায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। রোববার রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত দু’দিনের এ সম্মেলনের প্রথম দিনে উদ্যোক্তারা সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আজ সামিটের শেষ দিন। সম্মেলনে ভারতীয় শিল্প জায়ান্ট রিলায়েন্স গ্রুপ আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। দেশটির অপর একটি বড় শিল্প গ্রুপ ‘আদানি’ ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনও (আইএফসি) ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও ইউনিলিভারসহ দেশে বিদ্যমান অপর বহুজাতিক গ্রুপগুলোও ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছে। এ সম্মেলনে ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্তত ৩০টি দেশের শতাধিক উদ্যোক্তারা অংশ নিয়েছেন।
উদ্যোক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যানজট একটি বড় সমস্যা। এতে গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সুবিধা পেতে দীর্ঘদিন ধরে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে শুধু আশাবাদ শোনা যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। কবে নাগাদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত হবে কেউ জানে না। চিহ্নিত সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। নতুন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যবসা শুরুর একটি নীতিমালা ও সহজ পুঁজি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
সম্মেলনের ‘প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ : সুযোগ অবারিত’ শীর্ষক প্রথম কর্মঅধিবেশনের সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সহায়ক অবকাঠামোর বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। ইতিমধ্যে অনেক অগ্রাধিকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। রেলপথ উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রস্তুত। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। রাজধানীর যানজট নিরসনে একাধিক বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন বিনিয়োগে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে সুবিধা পাচ্ছেন। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় পাচ্ছেন। আর্থিক সহায়তা হিসেবে কিছু কিছু পণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তা, রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ দেশে বিনিয়োগ করুন, নিরাপত্তা এবং নীতি সহায়তা দেবে সরকার। প্যানেল আলোচক হিসেবে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, এ দেশে প্রায় সব খাতে বিনিয়োগ উন্মুক্ত। অবকাঠামোর মধ্যে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা আছে। তবে বন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে মনোযোগ দিতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার বলেন, আইএফসি আগামী ২ বছর পর এ দেশে বছরে ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। বর্তমানে বছরে ৬৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে থাকে আইএফসি। এ দেশে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে আইএফসি সহযোগিতা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সুশাসন এবং সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নীতির সমন্বয় প্রয়োজন রয়েছে। পুঁজির প্রয়োজনে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার কথা বলেন তিনি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আবরার আনোয়ার বলেন, এ দেশে বিনিয়োগ এখন মানবসম্পদ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। তাদের ব্যাংকের দুই হাজার কর্মকর্তাদের মধ্যে মাত্র চারজন বিদেশী। এর অর্থ এ দেশে মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং এমডি কামরান বাকর বলেন, ইউনিলিভারের বিনিয়োগের বড় বাজার বাংলাদেশ। এ দেশে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতার কথায় তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে এ দেশে ইউনিলিভারের যাত্রা শুরুর পর এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়েনি তার প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা দেশে নিয়ে যেতেও কোনো সমস্যা হয়নি।
অধিবেশনের সভাপতির বক্তব্যে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ বলেন, পুঁজিবাজার নিজেই ইমেজ সংকটে আছে। এটা জুয়ার আসরে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে অর্থ সংগ্রহের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সফল হওয়ার সুযোগ কম। প্রশ্নোত্তর পর্বে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, একে খান গ্রুপের এমডি সালাহ উদ্দিন কাশেম খান প্রমুখ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ‘ইনভেস্টমেন্ট এবং পিপিপি অপরচুনিটিজ ইন ইকোনমিক জোনস, টেক পার্স, এনার্জি অ্য্যান্ড পাওয়ার সেক্টরস’ শীর্ষক অধিবেশনে সভাপতিত্বকালে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে জিডিপির ৩৮ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকার অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করেছে।