সুনীল অর্থনীতির বিকাশে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘উপকূলীয় মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা: সুনীল অর্থনীতি ও রুপকল্প ২০৪১ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা জানান।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এ সেমিনার আয়োজন করে।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেস্ট ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমায় আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমুদ্র আমাদের সুনীল অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সম্ভার। সমুদ্রে থাকা জলজ সম্পদ তথা প্রচলিত বা অপ্রচলিত মাছ, সীউইড সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে পারলে এগুলো বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় যোগান হবে। সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হলে প্রচলিত মৎস্য, অপ্রচলিত মৎস্য এবং সীউইডকে পরিচর্যা করে এ ক্ষেত্রকে উপযুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে। সামুদ্রিক এ মৎস্যসম্পদ আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির যোগানের পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে”।
মন্ত্রী আরো বলেন, “রূপকল্প ২০৪১ হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারলে বাংলাদেশ উন্নত হবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে আমাদের অর্থনীতিকে জাগ্রত করতে হবে। আর অর্থনীতিকে জাগ্রত করতে আমাদের সম্পদ রপ্তানি করতে হবে। এজন্য সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। সুনীল অর্থনীতিকে কার্যকর করতে হবে। আর এ কাজে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে”।
তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তীতে দূরদৃষ্টি দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। একসময় নানা কারণে দেশে মাছের সংকট দেখা দিয়েছিল। মাছ দুর্লভ হয়ে গিয়েছিল, হারিয়ে যাচ্ছিলো। সে জায়গা থেকে গবেষণা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ৩১ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ আমরা ফিরিয়ে এনেছি। সরকারের সঠিক ভূমিকা ও ব্যবস্থাপনার কারণে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।”
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ আহরণে সরকার গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছ অহরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চলসহ ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে স্থান উপযোগী প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মৎস্য খাতে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।”
“উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হতে পারে, উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে, খাবারের বড় জোগান তৈরি হতে পারে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হতে পারে। এ জন্য মৎস্যসম্পদের উন্নয়সে সবাই মিলে কাজ করতে হবে”- যোগ করেন মন্ত্রী।
“মৎস্য খাতে যারা গবেষণা করছেন, বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছেন, মাঠে কাজ করছেন এবং যারা ব্যবস্থাপনা করছেন তাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। তাদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রকে ধারণ করতে হবে, দায় নিতে হবে। সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যেককেই অবদান রাখতে হবে।”-জানান মন্ত্রী।
বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আব্দুল লতিফ। মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর ও বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, মৎস্য বিজ্ঞানী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্যজীবী প্রতিনিধি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
এএ