পুঁজিবাজারের মাধ্যমে পাঁচ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন এসএমই উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ক্ষিলখেতের ডিএসই টাওয়ারে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানি রুলস ২০১৮-এর ভিত্তিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন আহরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে।
ডিএসই চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের এই সুযোগ নিঃসন্দেহে দেশের এসএমই খাতের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। তিনি আরো বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করাই যথেষ্ট নয়, একে সফল করতে হবে। তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে ৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও এসএমই’র সংজ্ঞা পরিবর্তন হলে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ভারতের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ৬০%, চীন ও জাপানে প্রায় ৭০% হলেও বাংলাদেশে মাত্র ২৫%। এই হার বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তিনি আরো বলেন, দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের অন্যতম বড় সমস্যা পুঁজি সংকট। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বছরে এই খাতে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়া হলেও প্রকৃত চাহিদা অন্তত তিন গুণ বা ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেই সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ করে দিতেই বিধিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তিনি এই সুযোগ গ্রহণ করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।
ডিএসই চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দুই দফায় প্যাকেজ ঘোষণা করলেও নানা জটিলতায় বেশিরভাগ উদ্যোক্তা তার সুফল পাননি। সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারা তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। কারণ দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে পুঁজিবাজার। তাই ব্যাংকে না গিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।
৩ বছর মেয়াদী সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে নিম্নোক্ত কর্মসূচিসমূহ পরিচালনা করবে:
১. এসএমই খাতের উন্নয়নে যৌথ গবেষণা পরিচালনা ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়;
২. পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের বিষয়ে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবহিতকরণের উদ্দেশ্যে যৌথ প্রচারণা;
৩. পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে এসএমই উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যৌথ উদ্যোগে সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজন;
৪. এসএমই ফাউন্ডেশন পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে আগ্রহী ও যোগ্য উদ্যোক্তাদের তালিকা সরবরাহ করবে;
৫. এসএমই খাতের উন্নয়নে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়;
৬. সবুজ অর্থনীতি বা পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়;
৭. এসএমই ফাউন্ডেশন এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে ধারণা প্রদান করবে এবং উভয় পক্ষ প্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় করবে।
প্রসঙ্গত, বর্ণিত বিধি অনুসারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন আহরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৩০ এপ্রিল ২০১৯ থেকে ‘ডিএসই এসএমই’ প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এসএমই খাতভুক্ত কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে।
এএ