ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সহায়তা দেওয়ারও দাবি জানায় সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক সভায় এসব দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআই এ সভার আয়োজন করে।
এসময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখারসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সহজ শর্তে বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের জন্য ব্যাংকগুলোতে ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ চালু, এসএমই সার্ভিস সেন্টার, নতুন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে বিশেষ সুবিধা প্রবর্তনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে এসব ইতিবাচক উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনীহা পরিলক্ষিত হয়। আমরা আহ্বান করছি যাতে সব ব্যাংকের শাখাসমূহে এসএমইদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা হয়।
মেয়াদি ঋণের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, এসএমই-দের চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণে চলমান ঋণ মঞ্জুর অব্যাহত রাখার এবং ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মেয়াদি ঋণের সময়সীমা ০১ বছর হতে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়াদি ঋণের সময়সীমা এক বছর হয়ে থাকে যার ফলে ঋণ পরিশোধে সমস্যা দেখা দেয়। এসএমই খাতের টার্মলোনের (মেয়াদি ঋণ) মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদী (৭-১০ বছর মেয়াদি) করার পাশাপাশি গ্রেস পিরিয়ড দুই বছর করা জরুরি। ঋণ দীর্ঘমেয়াদী করা হলে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আরও বাড়বে। পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
এক্সপোর্ট বিল অনেক ক্ষেত্রে সময়মত পরিশোধ করা হয় না অভিযোগ করে ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ নেতা বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় প্রয়োজনে ফোর্স লোন করে যথাসময়ে এক্সপোর্ট বিল পরিশোধ করার প্রস্তাব দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট দেওয়ার বিশেষ সার্কুলার জারি করলেও ২ শতাংশ টাকা জমা দেওয়ার পরও ব্যাংকের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক গ্রাহকই এর সুবিধা নিতে পারেনি। এতে শিল্পায়নে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারের লক্ষ্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও রুগ্নশিল্পগুলোকে এ সুবিধা দিতে ব্যাংকের অনীহার কারণে রুগ্নশিল্পগুলো এক্সিট নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমছে না।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার থাকার পরও অধিকাংশ ব্যাংক কর্তৃক নন-টেক্সটাইল খাতের রুগ্নশিল্পের দায়-দেনা নিষ্পত্তিতে অনাগ্রহী হওয়ায় বিষয়টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এতে ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী অর্থ আদায় বিলম্বিত হচ্ছে। যে সব শিল্পের ঋণ হিসাব রাইট অফ করা আছে সেগুলো এমনিতেই মৃত। সেগুলোকে সহজ-শর্তে এক্সিট দেওয়ার সুযোগ দিলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে তিনি জানান।
এবিবির চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যবসা ও অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে ব্যাংকাররা সব উদ্যোগ নেবে। তবে যেসব ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি রয়েছে তাদের ঋণ আদায়ে এফবিসিসিআইয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এসএমই নিয়ে তিনি বলেন, বড় ঋণ যত সহজে দেওয়া যায় এসএমই ঋণ তত সহজে দেওয়া যায় না। এসএমইসহ সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের পর খরচ বিবেচনায় অনেকে এ খাতে ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে প্রণোদনার আওতায় প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে। বিতরণকৃত প্রণোদনার ঋণ ব্যাংকগুলোকে ফেরত আনতে হবে। প্রণোদনার ঋণ কোনো অনুদান না। ব্যাংকগুলো দেখে শুনে ঋণ দেবে এটাই স্বাভাবিক।
এএ