প্রায় এক বছর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনটি জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠকে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, দলীয় কোন্দল নিরসন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ইশতেহার প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র সরকারি বাসভবন গণভবনে হওয়া এই বৈঠকে আমন্ত্রণ পান কেন্দ্রীয় ৫৩ জন নেতা। এর আগে গত বছরের ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় সবশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। তখন ৮১ সদস্যের মধ্যে ৩২ জন আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
দীর্ঘ সময় পর এই বৈঠক হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান জল্পনা-কল্পনা ছিলো। আগাম দলীয় কাউন্সিল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে ধারণা করছিলেন অনেকেই। তবে এই সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি বলা জানা গেছে।
দলীয় প্রধান নির্বাচনী ইশতেহার প্রনয়ণের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে তাই আওয়ামী লীগ বিরোধী অপপ্রচার বেশি হচ্ছে। এই সব অপপ্রচার সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেমিনারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার প্রনয়ণের কাজে হাতে দিতে বলেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপ-কমিটিগুলোকে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আটটি বিভাগের আটজন সাংগঠনিক সম্পাদকের বক্তব্য তিনি (নেত্রী) শুনেছেন কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেশে নেই, সেখানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের অন্য নেতারা আট বিভাগের ওপর নিজেরা লিখিত রিপোর্ট করেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের এলাকার ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত রাজনৈতিক চিত্র জানিয়ে রিপোর্ট উত্থাপন করেছেন নেত্রীর সামনে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেখানে যেখানে সাংগঠনিক সমস্যা আছে, সমাধান করা দরকার সেগুলোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। কিছু কিছু ছোট-খাট কলহ-বিবাদ আছে সেগুলোও মীমাংসা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পাবনায় গত পৌরসভা নির্বাচনে অনেকেই বিদ্রোহ করেছেন। তারা ক্ষমা চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছেন। প্রায় ২০ জন নেতা। তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আবার তিনি (শেখ হাসিনা) এও বলেছেন, যারা দলের ডিসিপ্লিনের বাইরে কাজ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া যাবে না।
সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে। যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, ততই অপপ্রচারের মাত্রা বাড়ছে। এসব অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। চক্রান্তমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
নোয়াখালীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে এখানে কোনো কথা হয়নি। সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন আলাপ-আলোচনা করে একটি কাঠামো তৈরি করেছেন নোয়াখালীর কমিটি নিয়ে। এ বিষয়ে নেত্রীও অবহিত আছেন। স্বপন এখন দেশের বাইরে আছেন। ফিরে এলে কাঠামো প্রকাশ করা হবে।
এএ