ডিজিটাল যুগে অনেক সহজেই যে কারো তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায়। তাই সত্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেজন্য এই প্রক্রিয়া বাদ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকারও।
অধিকাংশ সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়ন করতে হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় না জানায় অনেক কর্মকর্তা সত্যায়িত করতে চান না। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাকরিপ্রার্থীদের।
চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র আসল কি না অথবা আসল ডকুমেন্টের অনুলিপি কি না, তা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত সত্যায়িত করতে বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্রে একজন সই করে সাক্ষ্য দেবেন। সাক্ষী এমন ব্যক্তি হবেন, যার সাক্ষ্য বিশ্বাস করার যুক্তিযুক্ত কারণ আছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা, অষ্টম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব, বিশেষ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য, মেয়র বা স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, সরকারি অধ্যক্ষ, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সত্যায়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
তবে বর্তমানে এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকসহ প্রায় সব বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ওয়েবসাইটে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্রসহ হালনাগাদ তথ্য দেওয়া থাকে। নির্দিষ্ট ব্যক্তির রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও পাসের সাল দিয়ে যে কেউ যে কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করতে পারে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আইডি নম্বর দিয়েও সহজেই যেকোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার এত আধুনিক উপায় থাকা সত্ত্বেও গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠকে সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়িত করা লাগবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীরা অনলাইনে যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করবেন এবং পরীক্ষায় বসার অনুমতি পাবেন। কেবল যারা পাশ করবেন, তাদের পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার সময় মূল সনদ দেখাতে হবে।
তবে এ সিদ্ধান্ত এখনো পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। অধিকাংশ সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে নাগরিকত্ব/চারিত্রিক সনদ, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়।
নুরুননবী নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘দেশ ডিজিটাল হয়েছে। তবুও চাকরিতে আবেদনের সময় সেই পুরনো নিয়ম এখনো চলছে। অথচ সত্যায়িত করতে গেলে আমাদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়। আমরা এই পুরনো নিয়ম বাতিল চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সত্যায়ন প্রক্রিয়া ধীরে-ধীরে থাকবে না। এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা চলে আসবে।’
সানবিডি/ এন/আই