বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের আকার যেমনই হউক না কেন তার দৈনন্দিন গতি প্রকৃতি সম্পর্কে দেশবাসীর ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়- অন্তত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে। এ মার্কেটে প্রতিদিনের প্রাইস বাড়ছে না কমছে তার খবর অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় এসে থাকে। যারা সরাসরি শেয়ার ব্যবসার সাথে আদৌ জড়িত নন তাঁরাও সেগুলো খেঁয়াল করেন এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেকেই নানা মন্তব্য করে থাকেন। অনেকেই এ মার্কেটকে জুয়ার আসর মনে করে থাকেন। মোট কথা সমাজের বৃহত্তর একটি অংশের মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে শেয়ার মার্কেট খারাপ এবং সেটা জুঁয়ার সমতুল্য। ফেসবুকেও অনেকে সে বিষয়ে আমার মতামত জানতে চান। তাই এ নিবদ্ধে শেয়ার মার্কেট ও জুঁয়ার মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এটা অনস্বীকার্য যে ক্যাসিনো বা জুঁয়ার যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার কিছু না কিছু শেয়ার মার্কেটেও বিদ্যমান রয়েছে। যেমন উভয়ক্ষেত্রেই ক্যাপিটাল বা অর্থ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। আর আপনি কতটা ঝুঁকি নিবেন সেটাও আপনার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার বা চয়েস। উভয়ক্ষেত্রেই খেলোয়াড় চেষ্টা করেন ঝুঁকি যতটা কমানো যায় এবং কোন্ প্রক্রিয়ায় লাভ সর্বাধিক করা যায় তার উপায় অবলম্বন করতে। তবে সেরুপ মিল থাকা সত্বেও অমিলও কম নয়। যেমন গ্যাম্বলিং বা জুঁয়া খেলা ইভেন্ট নির্ভর। সেই ইভেন্ট শেষ হওয়ামাত্রই আপনার লাভ বা লস করার কোন সু্যোগ থাকে না। আপনি যদি আইপিএল এ কোন খেলায় বাজী ধরেন তবে খেলা শেষ হওয়ামাত্রই আপনার বাজীর ফলাফলও চূড়ান্ত হয়ে গেল। কিন্ত আপনি কোন শেয়ার কিনে সারাজীবন ধরে রাখতে পারেন এবং বিনিময়ে বছরশেষে ডিভিডেন্ড ও শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত ক্যাপিটাল গেইন পেতে পারেন। ক্যাসিনো খেলার বেলায় উদ্যাক্তারা এমনভাবে বোর্ড সাজাবেন যাতে লম্বা সময় ধরে খেলতে থাকলে কখনোই শেষ পর্যন্ত আপনি জিততে পারবেন না। কিন্ত শেয়ার মার্কেটের বেলায় তার বিপরীতটাই ঘটে। যদি দীর্ঘমেয়াদের জন্য কেউ সেখানে বিনিয়োগ করেন তবে এটা নিশ্চিত যে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। পৃথিবীর সব শেয়ার মার্কেট সে সাক্ষ্যই দেয়। শেয়ার মার্কেট ও জুঁয়ার মধ্যে আরো অনেকগুলো পার্থক্য রয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা কমানোর বেলায় শেয়ার মার্কেটে যতসব পদ্ধতি রয়েছে জুঁয়ার বেলায় তা নেই। দেশের শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেয়ার মার্কেট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেভাবে ভূমিকা রেখে থাকে সেটা জুঁয়ার বেলায় মোটেই প্রযোজ্য নয়।
আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জুয়ার শহর হচ্ছে আমেরিকার লাস ভেগাস। কত সব চোঁখ জুড়ানো, আলো ঝলমল নানা রংয়ের ঢংয়ের অজস্র হোটেল। আবাসিক হোটেলের থাকার রেইট খুবই কম – ২০/ ২৫ ডলার দিয়েই সেসব পাঁচতাঁরা সাততাঁরা হোটেলে রাত্রিযাপন করা যায়। এত সস্তার কারণ হোটেল মালিকরা জানে যে ক্যাসিনো থেকে যে আয় হবে তা সহজেই অতি নগণ্য রুম-রেটের ক্ষতি পুষিয়ে দিবে। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হোটেলে দিন -রাত চলে নানা টাইপের নাচ, গা্ন, সার্কাস এর লাইভ শো। প্রতিটি লবি লাউঞ্জে বসানো ছোট বড় অসংখ্য ক্যাসিনো মেশিন। মেশিনের স্লটে মানুষ ডলার ঢুকাচ্ছে- কখনো হারছে আবার কখনো জিতছে। যারা খেলছে তাঁরা নেশার মত খেলছে – কেউ কোন রকম হিসাব বা চিন্তা ভাবনাও করছে না। কারণ তারা জানে- চিন্তা বা হিসাব করে লাভ নেই। জেতার ব্যাপার সম্পূর্ণটাই ভাগ্য ও জেতার চান্স খুবই ক্ষীণ ভেবেও মানুষ সেখানে ক্রমাগত খেলে চলেছে। সেখানে মেশিন নিরপেক্ষ, ব্যবস্থাপনা নিরপেক্ষ, মেকানিজমও নিরপেক্ষ। কোনপ্রকার চালাকি, বিশ্লেষণ বা বিশেষ বুদ্ধি খাটিয়ে অতিরিক্ত কোন ফায়দা নেই। সেটাই তো আসল জুঁয়া। শেয়ার মার্কেটও কি ঠিক একই রকম? যদি একই হবে তবে কেউ কেউ এ মার্কেটে দীর্ঘদিন টিকে আছে্ন কেমন করে? কত শত মানুষ শুধুমাত্র শেয়ার মার্কেটের উপর ভর করে নিজ সংসার চালাচ্ছেন। কত এনালিষ্টরা শেয়ার মার্কেটের তথ্য উপাত্ত নিয়ে ক্রমাগতভাবে তাঁদের নিজস্ব বিশ্লেষণ করে চলেছে্ন। আসলে যারা শেয়ার মার্কেটকে জুঁয়ার সাথে তুলনা করেন তাঁরা গভীরভাবে চিন্তা না করেই এরুপ মন্তব্য করে থাকেন। শেয়ার মার্কেট একজন বিনিয়োগকারীকে প্রতিটি পদক্ষেপে কত কিছু চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্লেষণ করতে হয় ! ঝুঁকি কমিয়ে এখানে মুনাফা সর্বোচ্চকরণের যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তা জুঁয়া হতে পারে না – বরং তা বিজ্ঞানসম্মত এক পেশা। সে পেশায় জয়ী হতে প্রয়োজন বিস্তর অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক সাধারন মানুষ শেয়ার বাজারকে খারাপ ভাবা বা জুঁয়ার সাথে তুলনা করার ঐতিহাসিক কারণ হচ্ছে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ক্রাশ থেকে সৃষ্ট দুঃখ ও ক্ষোভ। সে দু’টি মার্কেট ক্রাশের ফলে অসংখ্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছিল। তারপর দীর্ঘ সময় শেয়ার মার্কেট পতনের বৃত্তে ঘুরাফেরা করার পর ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে মার্কেট আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো সে ঘুরে দাঁড়ানো ত্রূটিমূক্ত এবং যৌক্তিক ধারার ভিত্তিতে হয়নি বা এখনো হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে যে বিশেষ কিছু কোম্পানীর শেয়ার দাম অতিমাত্রায় ও অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে যা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে না। সেসব সেক্টরের অনেক স্বল্প মূলধনী কোম্পানীর প্রাইস-আর্ণিংস রেশিও (পি-ই) ৩০০ এর বেশী হয়ে গেছে।
জুঁয়া নয়- বরং বাস্তবে যে কোন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে ক্যাপিটাল বা শেয়ার মার্কেট উন্নয়নের সরাসরি যোগসুত্র থাকে। কারণ উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য প্রয়োজন হয় পুঁজি, আর সে পুঁজির অন্যতম বড় যোগানদার শেয়ার মার্কেট। একজন ব্যক্তির হয়তো কিছু সঞ্চয় রয়েছে যা দিয়ে কোন শিল্প কারখানা স্থাপন করার চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র; কিন্ত অনেক মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একত্রিত করা গেলে তা হয়ে উঠে শিল্পের জন্য অর্থ যোগানোর লক্ষ্যে নির্ভরযোগ্য একটি প্লাটফর্ম। শেয়ার মার্কেট হচ্ছে সেরুপ একটি প্লাটফর্ম যা সব ধরনের সঞ্চয়কে একত্রিত করে শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে প্রয়োজনীয় পুঁজির যোগান দেয়। অধিকন্ত একজন শেয়ারহোল্ডার তার সাধ্যের সীমার মধ্যে থেকে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করেন কোন কোম্পানীর মালিকানা - হউক না তা যতই সামান্য। শেয়ার মার্কেটের ব্যাপ্তি বাড়লে শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের জন্য শুধুমাত্র ব্যাংকের দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। এতে করে একদিকে যেমন ব্যাংকের উপর চাপ কমে অন্যদিকে শেয়ার মার্কেটে অর্থের যোগানদাতা অগনিত বিনিয়োগকারীগণ আর্থিকভাবে লাভবান এবং সেইসাথে দেশের শিল্পোন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান। আর শিল্পোন্নয়ন তো দরকার দেশের জনগণের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে। তাইতো লক্ষ্য করা যায় যে কোন দেশের অর্থনীতি যত বড় হয় সেদেশের শেয়ার মার্কেটের আকারও তত বৃদ্ধি পায়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই দেশের শেয়ার মার্কেটের প্রসার দরকার।
শেয়ার মার্কেটের উন্নয়ন ঘটলে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত কোম্পানীগুলোর জন্য তৈরী হয় ব্যাংক বহির্ভূত মূল্ধন যোগান দেয়ার বিকল্প উৎস। বর্তমানে দেশে খেলাপী ঋণ বেড়ে যাবার কারণে ব্যাংকগুলোও নতুন ঋণ বিতরণে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশী কঞ্জারভেটিভ অবস্থানে রয়েছে, যার ফলে নতুন উদ্যোক্তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এরুপ অবস্থা নিশ্চয়ই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে প্রত্যাশিত নয়। শেয়ার মার্কেটের প্রত্যাশিত উন্নয়নের অভাবে নতুন উদ্যোক্তারাও সম্ভাব্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশে এবং অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্যাপিটাল মার্কেটের ট্রাঞ্জেকশন তথা অংশগ্রহণ মোট জিডিপি’র কয়েকগুণ। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছনে পড়ে আছে। এখানে কোন ডেরিভেটিভস মার্কেট এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। বন্ড মার্কেট যেটা আছে তা না থাকার নামান্তর। কারণ সেখানে তেমন কোন লেনদেন হয় না। একমাত্র রয়েছে একটি শেয়ার মার্কেট এবং তার বয়সও কম নয় – প্রায় ৬৫ বছর। তদসত্বেও বলা যায় যে সময়ের অগ্রগতির সাথে শেয়ার মার্কেটের উন্নয়ন ঘটেনি। এ অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন শেয়ার মার্কেট এর টেকসই উন্নয়ন। আর সে বাস্তবতা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ সরকার শেয়ার বা ক্যাপিটাল মার্কেট সংশ্লিষ্ট রেগুলেটুরী সংস্থাসমূহের উন্নয়নে সেই ২০১২ থেকে অদ্যাবধি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর অর্থায়নে The Capital Market Development Program (CMDP) নামক ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সেরুপ ঋণ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ইকোনমিক ফিজিবিলিটি রিপোর্টও করতে হয়, যেখানে প্রজেক্টের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুফলের পূর্বাভাস প্রদান তথা প্রেডিক্ট করা হয়। ক্যাপিটাল তথা শেয়ার মার্কেট উন্নয়ন খারাপ কিছু হলে সরকার বা দাতা সংস্থাগুলো নিশ্চয়ই সেরুপ প্রজেক্ট গ্রহণ করতো না।
শেয়ার মার্কেটে মানুষ অর্থ বিনিয়োগ করলে দেশের লাভের সাথে সাথে নিজের লাভও রয়েছে। সঞ্চিত অর্থের ক্রয়ক্ষমতা বা পারচেজিং পাওয়ার ঠিক রাখতে প্রয়োজন মুদাস্ফীতির উর্ধ্বে রিটার্ন যা শেয়ার মার্কেট থেকে আসতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে সঞ্চিত জমা বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে ব্যাংকে এফডিআর, ব্যাংকে সঞ্চয়ী আমানত, ৩ ও ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়প্ত্র, ট্রেজারী বন্ড, কর্পোরেট বন্ড এবং ইকুইটি তথা শেয়ারে বিনিয়োগ। সেসব ইনস্ট্রমেন্টসগুলোর মধ্যে শেয়ারে বিনিয়োগ, বিশেষতঃ সিলেকটিভ ভাল কোম্পানীর শেয়ারে বিনিয়োগ মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে লাভজনক। শেয়ার ব্যতীত অন্যান্য ইনস্ট্রমেন্টস এ বিনিয়োগ বর্তমানে মোটেই লাভজনক নয়। বর্তমানে ব্যাংক এফডিআর এর সুদ গড়ে ৫ শতাংশেরও কম, সরকারী ট্রেজারী বন্ডে তা খুবই কম, সেভিংস সার্টিফিকেটে তা অদ্যাবধি আকর্ষণীয় থাকলেও সেটি ক্রয়ে নানা বিধিনিষেধ ও শর্ত রয়েছে। তার উপর সেসব থেকে প্রাপ্ত লাভের ১০-১৫ শতাংশ এডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। ফলে নীট লাভের পরিমাণ নগণ্য। তাই শেয়ার মার্কেটই উপযুক্ত ক্ষেত্র যেখান থেকে আকর্ষণীয় আয় তথা রিটার্ন আসা সম্ভব। ২০২১ সালে স্টক মার্কেটের সাথে অন্যান্য ইনস্ট্রমেন্টসের বার্ষিক রিটার্ন নীচে তুলে ধরা হলো (তথ্যসুত্রঃ ব্র্যাক-ইপিএল রিসার্চ রিপোর্ট)।
উপরের চিত্রে প্রথম দর্শনেই দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য ইনস্ট্রমেন্টসের তুলনায় শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করলে অনেক বেশী রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিন্ত লক্ষ্য করুন যে যেখানে সামগ্রিকভাবে ডিএসই স্টক থেকে গড়ে ১১.৯% রিটার্ন আসে সেখানে সিলেকটিভ ৭ কোম্পানীতে বিনিয়োগে মূলধনী লাভ এবং লভ্যাংশ প্রাপ্তি মিলিয়ে বার্ষিক রিটার্ন আসে গড়ে ২৬.১%। ব্র্যাক-ইপিএল বিগত ১০.৯ বছরে উক্ত ৭টি কোম্পানীর প্রকৃত রিটার্ন পর্যালোচনা করে কম্পাউন্ড এন্যুয়াল গ্রোথ রেট (CAGR) বা বার্ষিক রিটার্ন পেয়েছে। নীচে ঐ কোম্পানীগুলোর তথ্য উল্লেখ করা হলো।
(তথ্যসুত্রঃ ব্র্যাক-ইপিএল ইক্যুইটি রিসার্চ)
উপরের চিত্রে স্টক মার্কেটর রিটার্ন সম্পর্কে যেসব তথ্যাদি উল্লেখ করা হলো তার সবই বাস্তব ও প্রকৃত ফলাফল। তবে তার মানে এই নয় যে প্রত্যেক বিনিয়োগকারী সেরুপ রিটার্ন পেয়েছেন। প্রকৃত সত্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়তো তার বিপরীত- অজস্র বিনিয়োগকারী সেই ১০.৯ বছরে শেয়ার মার্কেটে থেকেও লোকসানের স্বাদ গ্রহণ করেছেন বা খুব কম নীট মুনাফা করতে পেরেছেন। কারণ তাদের অধিকাংশ হয়তো ভুল কোম্পানীতে বিনিয়োগ করেছেন, বারবার পোর্টফলিও পরিবর্তন করেছেন কিংবা অন্যের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে যথাসময়ে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেননি। ব্র্যাক-ইপিএল এর রিসার্চে বাজার অনুকূল পরিবেশে বর্ণিত ৭টি কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করে মোট ১০.৯ বছর ধরে রাখলে ডিসেম্বর ২০১৯ এর বাজারমূল্যে কিরুপ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব ছিল সেটা দেখানো হয়েছে। আর সেটা ছিল বিনিয়োগ- ট্রেডিং নয়। স্মার্টভাবে ট্রেডিং করতে পারলে বার্ষিক ২৬.১% এর চেয়েও বেশী রিটার্ন করা সম্ভব। তবে সেটা নির্ভর করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেডারের দক্ষতার উপর।
উপরে বর্ণিত শেয়ার মার্কেটের সেরুপ রিটার্ন কি কোন ধরনের ক্যাসিনো বা জুঁয়ার আসর থেকে আদৌ পাওয়া সম্ভব? যদি তা সম্ভব না হয় তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে উভয়ের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও তফাৎটাই মূখ্য। তারপরও শেয়ার মার্কেট ও জুঁয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বিবেচনার ভার সচেতন পাঠকদের উপরেই রইল।
শফিকুল ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব (অবঃ)
Email: msislam201386@gmail.com