আলুর দরপতনে বিপাকে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা । গত বছর লাভ বেশি পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি করে আলু চাষ করেছেন।
ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও হোটেল বন্ধ থাকায় বাজারে আলুর চাহিদা কমে যায়। ফলে হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলু অবিক্রিতই রয়ে গেছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র হিমাগার এগ্রো মহানন্দা কোল্ড স্টোরেজে প্রায় ৩০০ জন কৃষক ও ব্যবসায়ীর ৫০০ মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। লাভের আশায় আলু মজুদ করে এখন বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গত বছর করোনা ও বন্যায় অসহায় মানুষদের পাশে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি অনেক মানুষ এগিয়ে আসায় ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে আলু ছিল অন্যতম। ফলে সে বছর আলুতে প্রচুর লাভ করেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরে বেশি দামের আশায় অনেকে হিমাগারে আলু মজুদ করে রেখেছেন। কিন্তু বাজারে ভালো দাম না থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ বছর হিমাগার খরচসহ প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৮-২০ টাকা। আর বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে সাড়ে ১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৭-১০ টাকা। তাই হিমাগারগুলোতে পাইকারি ব্যবসায়ী না যাওয়ায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে হিমাগারগুলোতে আলু পচে নষ্টও হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো দাম পাওয়ার আশায় হিমাগার থেকে ঋণ নিয়ে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন তারা। কিন্তু আলুর দাম কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সদর উপজেলার আঙ্গারিয়াপাড়া মহল্লার আলু চাষি শামিম আহমেদ জানান, প্রতি বছর প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেন তিনি। এখন প্রতি কেজি আলু ১০-১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে এ বছর প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে তাকে। লোকসান ঠেকাতে এবং কৃষক বাঁচাতে সরকারকে আলু বিদেশে রফতানি করার দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ী মহব্বত আলী বলেন, চলতি বছর হিমাগার খরচসহ বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে ১২০০-১৪০০ টাকা। বিক্রি করতে গিয়ে বস্তাপ্রতি ৬৫০-৭০০ টাকা করে দাম পাচ্ছি। ২০ লাখ টাকার আলুতে ৭-৮ লাখ টাকা পাচ্ছি। আলু নিয়ে পথে বসে গেছি।
আলুর ব্যবসা করেন খাইরুল ইসলাম জানান, ১৯ লাখ ৬০০ টাকার আলু কিনে বিক্রি করতে পেয়েছেন ৮ লাখ ৫০০ টাকা। গত বছর আলুর দাম বাড়ায় প্রশাসন থেকে বার বার দাম কমানোর জন্য এসেছে। দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ বছর তো আমরা দাম পাচ্ছি না। এ বছর কেউ আসে না, কৃষক মরলেও কেউ দেখে না।
গত বছর আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা অস্বাভাবিক হারে লাভ করেছেন। ফলে চলতি বছরে জেলায় আলু চাষের পরিমাণও বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যবারের মতো এবার বৃষ্টি ও বন্যায় বিভিন্ন শাকসবজি নষ্ট হয়নি। এর ফলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও শাকসবজির বাম্পার ফলনে আলুর দাম কমেছে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর ১৩০০ হেক্টর জমিতে ২২ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন, শিবগঞ্জে ৪১০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন, গোমস্তাপুরে ২৭৫ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, নাচোলে ৩৫ হেক্টর জমিতে ৬৭৫ মেট্রিক টন ও ভোলাহাটে ২৪০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।
বর্তমানে দেশ থেকে ২০ ভাগ আলু বহির্বিশ্বে রফতানি হয়। কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগী ও হিমাগার ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশা, আলুর বিভিন্নমুখী ব্যবহার ও রফতানি করাসহ খুব দ্রুত সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। এতে কৃষকের হতাশা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন তারা।
সানবিডি/ এন/আই