কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ রোধে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মানসিক সমস্যা। আত্মহননের পথ বেঁচে নিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৫৭ জন শিক্ষার্থী।
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘করোনাকালে তরুণদের আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসমূহ খুলে দিলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জরিপ অনুযায়ী, মহামারিকালে তরুণদের মধ্যে অধিকাংশই মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। যেমন, অধিকাংশ সময় মন খারাপ থাকা, পছন্দের কাজ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। অস্বাভাবিক কম বা বেশি ঘুম হওয়া, কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা, সব কিছুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। এই সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারণ করলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, গ্রামের চেয়ে শহরের তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। কারণ শহরে করোনা'র প্রকোপ বেশি থাকায় তারা বেশি সময় রুমে আবদ্ধ থেকেছে বাইরে যেতে পারেনি। এই সময় তারা ভিডিও গেমস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা, মুভি দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। ফলে তারা মানসিকভাবে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে গ্রামে তুলনামূলক সোশ্যাল এনগেইজমেন্ট বেশি থাকায় আত্মহত্যার প্রবণতা কম। তাছাড়া ব্যস্ততা না থাকায়ও তারা হতাশায় পড়েন।
এই সমস্যার সমাধান কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তানসেন রোজ বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় যদি খুলে দেয় তাহলে তারা পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। প্রোডাক্টিভ লাইফ লিড করবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করবে। প্রাত্যহিক কাজ-কর্ম করবে। তাছাড়া অনিশ্চিত ভবিষৎ থেকে যে হতাশা, সেটাও কমে যাবে। এভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসায় আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সংগে উপাচার্যদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গত ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের করোনা'র টিকার অন্তত এক ডোজ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে যেকোনো দিন ক্যাম্পাস খুলে দিতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল খুলে দিলেও এখনও পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস শুরু হয়নি কোথাও।
এএ