বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৪টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতা এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশেই।
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১’ এর সফল সমাপ্তি করে বাংলাদেশ। প্রায় তিন ঘণ্টার জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডের এবারের আসর। রোববার (১০ অক্টোবর) রাতে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে আসরের বর্ণাঢ্য সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলসহ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এবং টেকনোহ্যাভেন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়া অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল এফবিসিসিআই, বেসিস, আইবিএ, এসিআই, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউথ পলিসি ফোরাম ও একাত্তর টিভি।
বহুল প্রত্যাশিত এই অলিম্পিয়াড এবারই প্রথম হংকংয়ের বাইরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের আয়োজনে একটি সিলভার, দুটি অন্যান্য ক্যাটাগরিসহ একটি প্রোটোটাইপ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ সর্বমোট চারটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১’ এর চেয়ারম্যান এবং টেকনোহ্যাভেন কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত হন হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা এবং ব্লকচেইন সোসাইটির ডেভিড সিজেল। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১’ সত্যিই একটি অসাধারণ ইভেন্ট; যেখানে সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়াসহ সকলের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং সকলে একসঙ্গে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দর ও সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে। ব্লকচেইন একপ্রকার ডেটাবেইজ টেকনোলজি যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড তরুণদের দ্বারা প্রযুক্তির গবেষণা ও বিকাশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার তরুণদের এই মেধা ও প্রচেষ্টাকে সবসময় সমর্থন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ব্লকচেইনের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রযুক্তি হলো নতুন ধারার ইন্টারনেট। পলক বলেন, এটা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। ফিনটেক, অ্যাগ্রোটেক, হেলথটেক, এডুটেক- প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ, কাল অথবা পরশু এই ব্লকচেইন ব্যবহৃত হবে। তাই আমাদের এই প্রযুক্তিকে আলীঙ্গন করতে হবে। সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
তরুণদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দীর্ঘমেয়াদে ইন্ডাস্ট্রিজুড়ে এই ব্লকচেইন- অপারেটিং মডেলের রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। যেভাবে আমরা ইন্টারনেটে ব্যাপকভিত্তিক তথ্য বিনিময় করি, তেমনি ভ্যালুচেঞ্জ, মালিকানা হস্তান্তর এবং লেনদেন যাচাইয়ে ব্লকচেইন ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কতটতা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পখাতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। তাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আমার আহ্বান, শেয়ারবাজার, অর্থমন্ত্রণালয়সহ দেশের বেসরকারি খাতকেও এই প্রযুক্তিতে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বড় স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুপরামর্শে ও নেতৃত্বে আমরা আইটি ও আইটিইএস শিল্পে প্রায় দুই মিলিয়ন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছি। আমরা গত এক দশকে ১২০ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবার তৈরি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা নতুন একটি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে পেরেছি যেখানে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সেবা খাতে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পেরেছি। সবশেষে, পুরো সরকারি ব্যবস্থাই ডিজিটাইজড করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এরপর অতিথিরা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২১’ এর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন। বিজয়ীদের জন্য সর্বমোট ৪০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়। মোট ৮টি ক্যাটাগরি প্রাইজসহ থিমেটিক প্রাইজ হিসেবে ব্রোঞ্জ, সিলভার এবং গোল্ড অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবারের আয়োজনে।
আইডেন্টি অ্যান্ড প্রাইভেসি ক্যাটাগরিতে হংকংয়ের ‘হেল্পপ্রুফ’ গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ১০ হাজার মার্কিন ডলার পেয়ে বিজয়ী হয়। এছাড়া সিলভার মেডেল অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ফিনটেক ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশের ‘হোপফুল্লি হাইপোথেটিক্যাল্লি থিওরেটিক্যাল্ল’ ৭ হাজার ৫০০ ডলার এবং সাপ্লাইচেইন ক্যাটাগরিতে ভিয়েতনামের ‘ভিফাচেইন’ ব্রোঞ্জ মেডেল অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ৫ হাজার ডলার পায়।
অন্যান্য ক্যাটাগরির মধ্যে ই-গভর্নেন্সে বাংলাদেশের রকেট, ডকুমেন্ট অথেন্টিফিকেশনে বাংলাদেশের ব্রোগ্রামারস্, ফিনটেকে হংকংয়ের ফিডেলো, হেল্থটেকে ভিয়েতনামের লাইফলিংক, আইডেন্টি অ্যান্ড প্রাইভেসি ক্যাটাগরিতে ভিয়েতনামের কিডক্যাট, এডুটেকে ফিলিপাইনের এডারনা, সাপ্লাইচেইনে হংকংয়ের টুলাক্স এবং প্রোটোটাইপের ফিনটেক ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের ডিইউ নিমবাসের নাম ঘোষণা করা হয়। ক্যাটাগরিভিত্তিক এই আটটি প্রজেক্ট প্রত্যেকে পাচ্ছে দুই হাজার ৫০০ ডলারের পুরস্কার।
গত ৮ অক্টোবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এই অলিম্পিয়াড চলে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। এ বছর অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি সিবিডিসি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি, ই-গভর্নেন্স, আইডেন্টিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি এবং ফিনটেক বিষয়ে মোট চারটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় মোট ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করে। গত তিনদিনে অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ এই ইভেন্টে বিচারক এবং বক্তা হিসেবে সংযুক্ত হন। সবশেষে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের চমৎকার মিউজিক্যাল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২০২১ এর আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডের আসর।
এএ