এপিআই উৎপাদন: ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-১০-১৩ ০৭:০৩:৩৬
ওষুধের কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) উৎপাদনকারীদের জন্য সুখবর দিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এপিআই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর অব্যহতি দিয়েছে এনবিআর। ১১ অক্টোর এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারী করেছে এনবিআর।
সূত্র মতে, ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে চায় বাংলাদেশ। স্বনির্ভরতা অর্জনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায় সরকার। ওষুধের কাঁচামাল সাধারণত অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) এবং ল্যাবরেটরি রিএজেন্ট নামে পরিচিত। এই খাতটিকে এগিয়ে নিতে আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআরএ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্য মতে, বর্তমানে ফার্মা কোম্পানিগুলোতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার কাঁচামালের চাহিদা রয়েছে। যা প্রতি বছর গড়ে ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে, ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার কাঁচামাল স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায়।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক টার্নওভারের ন্যূনতম ১ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে উন্নয়ন ও গবেষণা কাজে ব্যয় করতে হবে। আর এই বরাদ্দ বছর বছর বাড়াতে হবে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মানহীন কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক জরিমানার শিকার হয়, তবে ওই প্রতিষ্ঠান সেই বছরের অব্যাহতির সুবিধা পাবে না।
খাতটিকে শক্তিশালী করতে ২০০৮ সালে মুন্সিগঞ্জে এপিআই শিল্প পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পার্কে ২০০ একর জমিতে মোট ৪১টি প্লট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট ও খুলনায় বেসরকারি উদ্যোগে এপিআই পার্ক করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ওষুধের ক্ষেত্রে এপিআইয়ের খরচ ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে উৎপাদিত ৯৮ শতাংশ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। পূর্ণাঙ্গরূপে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এপিআই ও অন্যান্য কাঁচামালের ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কাঁচামাল আমদানিতে অধিক নির্ভরতার কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইন এবং মূল্য নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা কাজ করে।
বর্তমানে, স্কোয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, একটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, গ্লোব ফার্মা, গণস্বাস্থ্য ফার্মা, অপসোনিন ফার্মা, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল এবং এসকায়েফসহ স্থানীয় ১৫ টি প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ পর্যন্ত এপিআই উৎপাদন করে। এদের মধ্যে কেবল এক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত যা কোনো সম্পূর্ণ ওষুধ উৎপাদন করে না। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস একাই স্থানীয়ভাবে ৬০ শতাংশ এপিআই উৎপাদন করে।
আমেরিকান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ-র মতে, দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজারের মূল্য ২০২০ সালে ১০ শতাংশের বেশি বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার মেডিসিন রপ্তানিও করে থাকে। তবে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০টি প্রতিষ্ঠান মোট ওষুধের ৭১ শতাংশ বিক্রি করে।
২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পর ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ট্রেড-রিলেটেড এসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস)-এর আওতায় পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।