অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠমো ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আন্দোলনের যৌক্তিকতা, বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সানবিডি ২৪ ডটকমের সাথে কথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (রাবিশিস) সভাপতি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের রাবি প্রতিনিধি আলী ইউনুস।
সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
সানবিডি ২৪ ডটকম: স্যার কেমন আছেন?
আনন্দ কুমার সাহা: হ্যাঁ ভালো আছি।
সানবিডি ২৪ ডটকম: আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন!
আনন্দ কুমার সাহা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঈদুল আযহা ঊপলক্ষে বন্ধ ছিল। এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণভাবে চালু হতে পারেনি। আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) গতকাল খুলেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর আগামী ৬ অক্টোবর ঢাবি শিক্ষক ক্লাবে শিক্ষক ফেডারেশনের এক্সিকিউটিং কমিটির মিটিং হবে এবং ওই দিন বেলা ৩টায় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনা সভা হবে । তারপরই শিক্ষক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিবে এরপর কী কী কর্মসূচি আসবে।
সানবিডি ২৪ ডটকম: ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলনের যৌক্তিকতা কতটুকু?
আনন্দ কুমার সাহা: আমরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এমন কিছু করতে চাইনি। আমরা প্রথমত শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের দাবি গুলো সরকারের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধরে কর্মসূচি দিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমাদেরকে ক্লাস বর্জনের মত কর্মসূচি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবুও তিন ঘণ্টা ক্লাস বর্জন করে পরীক্ষা চলমান রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
সানবিডি ২৪ ডটকম: আপনাদের দাবিগুলোর যৌক্তিক কারণগুলো বলবেন কী?
আনন্দ কুমার সাহা: আমরা যদি ৭ম বেতন কাঠামোর দিকে তাকাই সেখানে ঠিকই ছিল । আর ৮ম বেতন কাঠামোতে বেতন ও পদমর্যাদা বাড়িয়ে সচিবদেরকে সিনিয়র সচিবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের বেতন ও পদমর্যাদা বাড়ানো হয়নি। কেন ? কোন যুক্তিতে? আসলে আমাদের এই আন্দোলনকে যারা অযৌক্তিক মনে করছে, এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের এই আন্দোলন বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। এভাবে আমাদেরকে অবজ্ঞা করলে কোন ভালো শিক্ষার্থী এই পেশায় আসবে না। কেন আসবে? কোন যুক্তিতে আসবে ? আমরা যেখানে ছিলাম, যাদের সাথে ছিলাম তাদের সাাথে একই রাখা হলে ,আমাদের তো কোন কথা বলার দরকার ছিলো না । কিন্তু আমাদেরকে আরো দুই ধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ, পিএইচডি থাকলে অধ্যাপক হতে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ১২বছর সময় লাগে। আর পিএইচডি না থাকলে ২৪বছর সময় লাগে। সুতরাং যোগ্যতা সম্পন্ন হয়েই একজন শিক্ষককে অধ্যাপক হতে হয়। তাই শিক্ষক হিসেবে আমাদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান না করা অনুচিত।
সানবিডি২৪ ডটকম: আগামী ৬ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকটি আপনি কতটা ইতিবাচক মনে করছেন ?
আনন্দ কুমার সাহা: শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আগামী বৈঠক নিয়ে আমরা আশাবাদী। শিক্ষামন্ত্রী এর আগেও আমাদের দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার সাথে সাথে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সানবিডি ২৪ ডটকম: ৬ তারিখের পর কর্মসূচি দেয়া হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকবে কি ?
আনন্দ কুমার সাহা: আমরা আন্দোলন করতে চাইনা, আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। আগামী ৬ তারিখের বৈঠকের পর কোন আশ্বাস না পেলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আওতামুক্ত রাখা সম্ভব হবে না।
সানবিডি ২৪ ডটকম: সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
আনন্দ কুমার সাহা: আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এধরনের বক্তব্য আশা করিনি। সবার সাথে আলোচনা করেই এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়া হবে।
সানবিডি ২৪ ডটকম : দাবি পূরণ না হলে কেমন কর্মসূচি আসতে পারে ?
আনন্দ কুমার সাহা: কর্মসূচি প্রসঙ্গে আসলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন জোট যে কর্মসূচি দিবে আমরা সেই কর্মসূচি পালন করেছি, করবো। দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি, আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা সরকারকে জানানোর চেষ্টা করছি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ আশা করি আমাদের এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা রাষ্ট্র বুঝবে। সাথে সাথে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও উপযুক্ত পদমর্যাদা ফিরিয়ে দিবে।
সানবিডি ২৪ ডটকম: ধন্যবাদ স্যার আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ।
আনন্দ কুমার সাহা: আপনাকেও ধন্যবাদ