রংপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেহাল দশার কারণে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি এখনও অনেক। বাধার মুখে পড়েছে এখানকার শিল্পের বিকাশ। পিডিবি আর নেসকো (নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) বলছে এই অঞ্চলের মানুষকে অনেক লোডশেডিং সহ্য করতে হয়। এর সঙ্গে লো ভোল্টেজ এর জট থেকেও বের হতে পারছে না রংপুর।
বিদ্যুৎ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন সরকার উত্তরবঙ্গের কথা চিন্তা করে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রভাবশালী একটি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি পরিবহনে সমস্যার কথা বলে তারা কেন্দ্রটি উত্তরবঙ্গ থেকে বরিশাল নিয়ে গেছে। এতে বরিশালে বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বাড়লেও উত্তরের মানুষ কোনও সুবিধাই পায়নি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে সুষম বণ্টন চিন্তা করা হয়নি। এতে কোনও এলাকায় চাহিদার চেয়ে বেশি কেন্দ্র হয়েছে, কোনও এলাকায় বিদ্যুতই পাওয়া যাচ্ছে না। এর জন্য সরকারের পরিকল্পনাকেই দায়ী করছেন তারা।
বর্তমানে রংপুর বিভাগে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র সাতটি। এর মধ্যে আট মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। সবগুলোর মোট ৬০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও এখন মাত্র দুটি কেন্দ্র সচল। সেগুলো থেকে দিনে আসছে মাত্র ১৯৩ মেগাওয়াট। বড়পুকুরিয়ার একটি ইউনিট থেকে ৮০ মেগাওয়াট ও কনফিডেন্স পাওয়ারের একটি কেন্দ্র থেকে ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
বড়পুকুরিয়ার তিনটি ইউনিটের দুটিই কয়লার অভাবে অনেক দিন ধরে বন্ধ। এ ছাড়া রংপুর ২০ মেগাওয়াট ও সৈয়দপুর ২০ মেগাওয়াটও বন্ধ।
পিজিসিবি সূত্র বলছে, দূর থেকে রংপুরে বিদ্যুৎ নেওয়াটা কষ্টসাধ্য। এজন্য কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে সঞ্চালন লাইনও গুরুত্বপূর্ণ। এর সংখ্যা না বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও তা সবখানে পৌঁছাবে না। পাশাপাশি ২০২৪ সাল নাগাদ যদি রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে তখনও উৎপাদন বাড়বে।
রংপুরের বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নেসকোর রংপুর বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, ‘রংপুর বিভাগে এখন বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ১০০-১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা খারাপ। জাতীয় গ্রিড থেকে আনতে গেলে লো ভোল্টেজ পাচ্ছি। ফলে পিক আওয়ারে প্রায় তিন-চার ঘণ্টার লোডশেড করেই পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হচ্ছে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘এ পরিস্থিতির মূল কারণ দুটি—অপরিকল্পনা ও দুর্নীতি। অপরিকল্পনার কারণে দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গিয়ে একগাদা বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের যেসব কেন্দ্র করা হয়েছে সেগুলো হয় বন্ধ, না হয় উৎপাদন কম। রংপুরের মতো অবস্থা এখন অনেক এলাকারই। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লেই হবে না। সুষম বণ্টনও জরুরি।
সানবিডি/এনজে