মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নত ও সমৃদ্ধ কৃষির জন্য ‘ভরসার নতুন জানালা’ খুলে দেবার অঙ্গীকারে দেশের প্রথম সারির বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও স্বেচ্ছাব্রতী নাগরিক সংগঠন বিসেফ ফাউন্ডেশন এবং বিকশিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন দেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
একই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল অডিটোরিয়াম (BARC)-এ ‘ভরসার নতুন জানালা’ কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলন-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রী ড.মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এম.পি।
দিনব্যাপী তিন পর্বে বিভক্ত কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনটিতে ৩৩ জেলা থেকে কৃষি উদ্যোক্তাগণ অংশ নেয়। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক-এর সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল হাকিম, ইউসিবি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ডঃ শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সংগঠক ও বিসেফ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘কৃষক সংলাপ’ যেখানে বিভিন্ন কৃষি উদ্যোক্তাগণ নিজেদের সুখ-দুঃখ গাঁথা, অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডঃ সৈয়দ আরিফ আজাদ-এর সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সাবেক মহাপরিচালক ডঃ এম.এ মুয়ীদ, বিসেফ ফাউন্ডেশন এর সহ-সভাপতি টি আই এম জাহিদ হোসেন, ইউসিবি-এর ইভিপি জাভেদ ইকবাল এবং ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দা ফাওজিয়া ইয়াসমিন।
সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডঃ শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পার্বত্য জনপদের মং সার্কেল এর রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, ইউসিবি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানী সেক্রেটারী এটিএম তাহমিদুজ্জামান এফসিএস, এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরিচালক ড মোঃ আবু সাইদ মিঞা। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
‘ভরসার নতুন জানালা’ নামক কর্মসূচীর আওতায় দেশের দক্ষিণে অবস্থিত পাহাড়ী জনপদ থেকে শুরু করে সুদূর উত্তরের পঞ্চগড় জেলা পর্যন্ত বেশ কিছু উদ্যোক্তা কৃষক সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে, বিতরণ করা হয়েছে সহজ শর্তের কৃষি ঋণ এবং কৃষি প্রণোদনা সহায়তা। কৃষি উদ্যোক্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরাজমান ‘দুরত্ব’ কমিয়ে আনার ‘উপায়’ খোঁজা এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ কৃষির বিকাশে সহজ শর্তে ও মানবিক অর্থায়নের সুযোগ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী ড.মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এম.পি বলেন, “ বাংলাদশে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। যেখানে ভারত ও চীনে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫ শত‘র নিচে মানুষ বাস করছে, সেখানে আমাদের দেশে রয়েছে ১২ থেকে ১৩‘শ। তাছাড়া প্রতিবছর যেহারে নতুন মুখ তৈরি হচ্ছে তাদের খাওয়ানোর জন্য আমাদের কিন্তু নতুন জমি বাড়ানো সম্ভব না। সেজন্য আমাদের কৃষকদেরকে আধুনিকায়ন ও বানিজ্যিকিকরণ করতে হবে। যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে এবং উন্নত জীবনে পা রাখতে পারে। কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে আমার গ্রামকে শহরে পরিণত করতে চাই। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজও করে যাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “এবছর আমরা ১ বিলিয়ন টাকার কৃষি পণ্য রফতানি করেছি। ইতোমধ্যে, কৃষি পণ্যের রফতানি বাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের পূর্বাচলে ২ একর জমি দিয়েছে। যেখানে আমরা একটি আধুনিক ল্যাব তৈরি করবো। তাছাড়া দেশের নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা হবে। যেখানে সকল উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের ব্যাংকের এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকগুলোকে ইন্টারেস্ট সুবিধার কথা চিন্তা না করে তারা যদি সাভির্স সেক্টর হিসেবে ভাবে কৃষকরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। যার ফলে আমরা কৃষকদের নিয়ে উন্নত দেশে পৌঁছাতে পারবো।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের পরিশ্রমী ও সৃজনশীল কৃষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও সহায়তায় বাংলাদেশের কৃষি এখন রপ্তানীমুখী। আমাদের কৃষি অদম্য এবং সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সহায়ক পরিবেশ ও মানবিক অর্থায়ন। প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিবেশ পেলে কৃষি হতে পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম ভিত্তি। আজকের এই কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনটি দেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের মনে ‘ভরসার নতুন জানালা’ খুলে দিবে। সোনার বাংলা গড়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর ‘উপায়’ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।”
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড দেশজুড়ে বিস্তৃত শাখা নেটওর্য়াকের মাধ্যমে গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করে আসছে। বর্তমানে ইউসিবি এর ২০৮ টি ব্রাঞ্চ এবং ৬টি নতুন অপেক্ষমান ব্রাঞ্চ-এর সাথে আরও রয়েছে ১৫০ টিরও বেশি উপ-শাখা। পাশাপাশি ৬০০ টিরও অধিক এটিএম বুথের মাধ্যমে সারা দেশে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে আসছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।
এএ