কাল ৪৬তম জেলহত্যা দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন। রাষ্ট্রীয় মদদে ৩ নভেম্বর নিজের অস্তিত্ব সংকটের সময় মোশতাকের সরকারের জেলখানার মধ্যেই খুন করা হয় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাক জাতীয় চার নেতাকে তার সরকারে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানায়। স্বাধীনতাযুদ্ধে একসঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়া এসব নেতা মোশতাককে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ব্যর্থ মোশতাক ২৩ আগস্ট তাদের গ্রেফতার করেন। এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটার নজির নেই। অথচ ঘটনাবহুল এই দিন কেন জাতীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি তার সদুত্তর দিতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টা এভাবে ভেবে দেখা হয়নি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিনের অনেক জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে হচ্ছে। এই বিষয়টাও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় চার নেতার হত্যার দিনটি কখনোই সরকারিভাবে পালন করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় চার নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত, সব হয় না। জেলাহত্যা দিবস গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত।
জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে কিছু দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দিবস সংক্রান্ত প্রস্তাব উঠানোর পর মন্ত্রিসভা সম্মতি দিলে সেটির পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সম্পর্কিত একটি তালিকা পরিপত্র আকারে প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ। পরিপত্রে বছরে তিন ক্যাটাগরিতে ৮৬ দিবস পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনে অন্তর্ভুক্ত আছে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস। এই দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের সম্পৃক্ততা থাকে। এছাড়া এই শ্রেণিতে দেশের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোও আছে। বর্তমানে ক শ্রেণিভুক্ত দিবসের সংখ্যা আছে ১৯টি। ধর্মীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ দিবস ক ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হলেও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী নেতাদের হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক ৩ নভেম্বর এখানে স্থান পায়নি এখনো। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে সরকার গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবসটিও ক শ্রেণির মর্যাদা পায়নি। বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগরে শপথ নিয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। এই দিবসটিকে খ তালিকায় রেখেছে সরকার। ক ক্যাটাগরির দিবসে ব্যক্তি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যদের স্মরণে আছে জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চ। শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী ৫ আগস্ট। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ৮ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট এবং ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী। এছাড় ক শ্রেণির অন্য দিবসগুলো হলো-আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি। গণহত্যা দিবস ২৫ মার্চ। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ। মে দিবস ১ মে। বুদ্ধ পূর্ণিমা মে মাসে। বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। বড়দিন ২৫ ডিসেম্বর। বাংলা নববর্ষ ১ বৈশাখ। রবীন্দ্রজয়ন্তী ২৫ বৈশাখ। নজরুলজয়ন্তী ১১ জ্যৈষ্ঠ। ঈদুল ফিতর ১ শাওয়াল। ঈদুল আজহা ১০ জিলহজ। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল এবং দুর্গাপূজা।
খ ক্যাটাগরিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পালিত হয়। খ ক্যাটাগরিতে থাকা দিবসের সংখ্যা ৩৪টি। এই দিবসগুলোতে সাধারণত মন্ত্রীরা অংশ নেন। তবে খ ক্যাটাগরির কোনো কোনো দিবসে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর বাইরে দিবস পালন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিশেষ প্রতীকী দিবস গ ক্যাটাগরিতে পালিত হবে ৩৩টি দিন। এই দিবসগুলোকে সরকার গ তালিকাভুক্ত করেছে। এমন দিবসের সংখ্যা ৩৩টি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অনেক আগেই এই দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল। অন্যদিকে মন্ত্রিসভার সিনিয়র একজন সদস্য বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হলে অনেক আগেই বিষয়টা মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের উদ্যোগ নিতাম। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ এই নায়কদের এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এক যুগ ক্ষমতায় আওমী লীগের আমলে এই কাজটি অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।
সানবিডি/ এন/ আই