জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, তেল আমদানি করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। আমলারা এতবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘এই কাজটি আমরা করিনি। আর তেলের দাম কমালেও পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ওয়েবিনারে তিনি এ কথা করেন। এফইআরবি’র চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর।
সচিব বলেন, ‘আমদানি করা তেলের মধ্যে ৭৩ ভাগই ডিজেল। আর অকটেন ও পেট্রোল খুবই কম আমদানি করা হয়। ফলে এই দুটির দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা আমরা করিনি। অযথা গুজব রটানোর দরকার নাই। এদিকে ডিজেলের তুলনায় কেরোসিনের ব্যবহার মাত্র ১.৬ ভাগ। কিন্তু মিশ্রণের কারণে সমন্বয় করতে গিয়ে দাম একই রকম করেই বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি জানান, বিপিসি জেট ফুয়েল, এইচএফও, এলপিজি নিয়মিত অ্যাডজাস্ট করছে। নিয়মিত ডিজেলের দাম কমানো-বাড়ানো হলে তো পরিবহনে কোনও পরিবর্তন আসবে না। এটা নিয়ন্ত্রণ আমাদের দায়িত্ব হলেও নেতাদের নানা দাবি, যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’
আনিছুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে আসলে সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। কিন্তু পরিবহনের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা বুঝতে পারছি, সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে একটু চাপ পড়বে। কোভিড উত্তর রিকভারিতে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু আমাদের উপায় ছিল না। আন্তর্জাতিক বাজারে সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। গ্যাসের পাইপের দামও বেড়েছে, আমরা অনেক প্রকল্প রিভাইস করেছি। সারের দামও বেড়েছে। একই অবস্থা এলএনজির ক্ষেত্রেও।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, ‘এককভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার নেই বিপিসির। বিপিসি আমদানি করে, বিক্রি করে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি সরকারের সিদ্ধান্ত। বিপিসি শুধু এটা বাস্তবায়ন করেছে। গত কয়েক বছরে যে মুনাফা করেছে বিপিসি, সেই টাকা দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হযেছে। শুধু এসপিএম বাস্তবায়ন হলে মাসে ৮’শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম ৪-৫ গুণ বেড়েছে, কয়লার দামও বেড়েছে ৫ গুণ। সবকিছু একসঙ্গে জাতির কাঁধে ভর করেছে। জুলাই ২০২০ সালে থেকে জুন ২০২১ পযর্ন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘ডিজেল নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। তাই পেট্রোল অকটেনের তুলনায় কম দাম রাখার দর্শন কাজ করতো। আমরা কি সেই দর্শন থেকে বের হয়ে আসতেছি!’
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ হয়নি। আইনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে তেলের দাম বৃদ্ধির আদেশ প্রত্যাহার করে বিইআরসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক— আদৌ তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা।’ বিপিসির কার্যক্রম নিরীক্ষা করা উচিত, তাদের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘ডিজেল নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে তাই পেট্রোল অকটেনের তুলনায় কম রাখার দর্শন কাজ করতো। আমরা কি সেই দর্শন থেকে বের হয়ে আসতেছি?’
সভাপতির বক্তব্যে অরুণ কমকার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিবেচনা আসেনি। পরিবহন সেক্টরের বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কেন, এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। আমাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো, সেটাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি একেএম হাতেম, সিপিডির পরিচালক (গবেষণা) খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিজেএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এএ