করোনাভাইরাস তাদের দেরি করিয়ে দিয়েছে নয় মাস, অবশেষে স্কুল জীবনের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসেছে মাধ্যমিক পর্যায়ের সোয়া ২২ লাখ শিক্ষার্থী।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রোববার সকাল ১০টায় বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
সংক্রমণ অনেকটা কমে এলেও ভাইরাসের ভয় পুরোপুরি কাটেনি। তাছাড়া দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার জের টানতে হচ্ছে এই শিক্ষার্খীদের। তাই পরীক্ষা হলেও এবার নিয়ম অন্যরকম।
এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধু তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তিন ঘণ্টার বদলে পরীক্ষা হচ্ছে দেড় ঘণ্টার। বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
দেশের ২৯ হাজার ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন শিক্ষার্থী এবার মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছে। মহামারী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার মোট ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। স্কুলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সবার তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই উদ্বেগ নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে অভিভাবকদের।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবছর ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ জন দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন এসএসসি ভকেশনাল পরীক্ষা দিচ্ছে।
তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১ জন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে, ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫ জন মানবিক বিভাগ থেকে ও ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।
২০২০ সালের তুলনায় এ বছর এসএসসিতে পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন বা ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এ বছর দেশের বাইরে নয়টি কেন্দ্রে (জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলী, দোহা, আবুধাবী, দুবাই, বাহরাইন, ওমানের সাহাম ও গ্রিসের এথেন্স) ৪২৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরুর পরদিন সোমবার সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা এবং বিকালে হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষা হবে।
১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে রসায়ন (তত্ত্বীয়), ১৮ নভেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়), ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকালে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারি মাসেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছিল। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই মাধ্যমিকের পরীক্ষা শেষ হয়। তবে কোভিডের কারণে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবারের পরীক্ষা পিছিয়ে যায় নয় মাস।
পরীক্ষা নিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ থাকলেও সংক্রমণ কমে এলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে আসছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা না নিয়ে গতবারের এইচএসসির মত সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা এবার ছিল না।
গত সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজে সরাসরি ক্লাস শুরুর পর এমন সময়ে সরকার এ পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে, যখন দেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্তের হার দেড় শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। পরীক্ষা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ারও ব্যবস্থা হয়েছে।
তারপরও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সব কেন্দ্রে হাত জীবাণুমুক্ত করা ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুমও। কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের ভিড় না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কেউ যেন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ না করে সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
সানবিডি/ এন/আই