‘শিক্ষকদের বেতন বাড়েনি গ্রেড কমেছে’

আপডেট: ২০১৫-১০-০৫ ১৬:১৬:০৫


Khabir Uddin

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছেন। শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোয় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। আর এই ঘটনার মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতকালকের বক্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের তীব্র সামালোচনা করে সানবিডি২৪.কম এর মুখোমুখী হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সানবিডি২৪.কম এর জাবি প্রতিনিধি শরীফুল কবির শামীম, সহযোগিতায় ছিলেন শামছুল আরেফীন হাসিব।

সানবিডি ২৪ ডটকম: স্যার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনাদের বেতন ৯১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে; যা চিন্তার বাইরে ছিল। তবুও আপনারা কেন আন্দোলন করছেন?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তাঁর বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছ থেকে আমরা এই ধরনের বক্তব্য কোনভাবেই আশা করি না। তাঁর কথায় আংশিক ভুল রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের বেতন ৯১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড এবং টাইমস্কেল বাদ দেয়ায় মাধ্যমে সিনিয়র অধ্যাপকদের গ্রেড পূর্বের চেয়ে দুই স্তর নামিয়ে দেয়া হয়েছে ।

সানবিডি ২৪ ডটকম: শিক্ষকরা আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে সুশীল সমাজ মনে করছেন। এ ব্যাপারে আপনি কি বলতে চান?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: আমরা একটি যৌক্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছি। আশা করি আমাদের ছেলেমেয়েরা তা ভালো করেই বোঝে এবং অনেকেই আমাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে।  সুশীল সমাজেরও এটা বোঝা উচিত। আর আমরা আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়মিত নেয়া হচ্ছে।

সানবিডি ২৪ ডটকম: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সচিবদের সাথে আপনাদের যে তুলনা করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা চাকুরীর পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস নিয়ে থাকি। আমাদের সকল শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয় না। গুটিকয়েক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসের ফাঁকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন। আর আমি যতদুর জানি,  বর্তমানে ১৫-২০ শতাংশ সচিব বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন। আমার কাছে এর তথ্য প্রমাণ আছে।

সানবিডি ২৪ ডটকম: স্যার অন্যান্য সরকারী চাকুরীজীবীদের বয়সসীমা ৫৯ বছর অন্যদিকে আপনাদের ৬৫……………..

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, কোন প্রয়োজন নেই আমাদের চাকুরীর বয়স ৬৫ বছর রাখার। অন্যান্য চকুরীজীবীদের মত আমাদেরও বয়সসীমা ৫৯ রাখা হোক তাতে আমাদের কোন আপত্তি  নেই। মর্যাদা খোয়ানোর পর ৬৫ বছর দিয়ে তো কোন লাভ নাই।

সানবিডি ২৪ ডটকম: মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে যদি কিছু বলবেন কি?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: তার বক্তব্যের নিন্দা জানাই। দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে তাঁর নিকট থেকে এ বক্তব্য মোটেই কাম্য নয়। তার বক্তব্যের ভাষা আরো মার্জিত হওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।

সানবিডি ২৪ ডটকম: স্যার আন্দোলনে সরকার ও আপনাদের অবস্থান বিপরীতমুখী বলে দেশের জনগণ মনে করছে। এ আন্দোলনের শেষ কোথায় বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: আজ যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বের হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই তাদের যোগ্যতার ভিত গড়ে দিয়েছে। সেই যায়গা থেকে চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই যৌক্তিক দাবি সরকার মেনে নেবে এবং খুব দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করবে বলে আমি মনে করি। আপনি জেনে থাকবেন যে, আগামীকাল আমাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বসার কথা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই একটি সমাধান দাড় করানো সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি।

সানবিডি ২৪ ডটকম: সব সরকারী কর্মকর্তা কিন্তু সচিব হয় না। কিন্তু শিক্ষকদের প্রায় সবাই এক সময় অধ্যাপক হয়ে যায়। তাহলে সব শিক্ষক কেন সচিবের সমপর্যায়ে যাবে?

অধ্যাপক ড. মোঃ খবির উদ্দিন: আমাদের আন্দোলন কোন সময়ই সুযোগ-সুবিধার জন্য ছিল না। অষ্টম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেয়ার মাধ্যমে অধ্যাপকদের অবস্থান দুই গ্রেড নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এরই প্রতিবাদ জানিয়েছি।

সর্বপরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি খবির উদ্দিন আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা মর্মাহত। আসলে আমলারাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। আমরা আমাদের সম্মান ও অস্তিত্বের প্রশ্নে আন্দোলন করছি। আসলে শিক্ষদের সঙ্গে আমলাদের কখনো তুলনা হয়না। আমলাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আর শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাক রয়েছে। অনেক দেশেই শিক্ষকদের চাকুরীর কোন বয়সসীমা নেই। আমরা গত মে মাস থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমালাদের কারণে সে সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। আগামী মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমাদের বৈঠক আছে। সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে কঠোর কর্মসূচীতে না গিয়ে আমাদের উপায় থাকবে না।

সানবিডি/ঢাকা/এসকে/এসএস