২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেবার মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্ব খেলেছিলেন তামিম-সাকিবরা। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন।
কখনো খেলা হয়নি সেমিফাইনাল। তবে চলমান যুব বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য গতিতে আগানো বাংলাদেশের যুবাদের সামনে এখন ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আর মাত্র একটি ম্যাচ জিততে পারলেই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠবে যুবারা। সেমিতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের বাধা চলতি আসরে রূপকথার জন্ম দেয়া নেপাল।
আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রতিবারই সম্ভাবনাময় দল নিয়ে গেলেও একবারও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বাংলাদেশের। নয়বার অংশ নিয়ে ছয়বারই খেলতে হয় গ্রুপ পর্ব উতরাতে না পারা দলগুলোর সঙ্গে আয়োজিত প্লেট পর্বে। যুব বিশ্বকাপে তিনবার গ্রুপ পর্ব উতরালেও কখনো সেমিফাইনাল খেলা হয়নি জুনিয়র টাইগারদের।
তবে এবার ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মিলেছে দারুণভাবে। ‘এ’গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ জিতেছে দাপটের সঙ্গে। প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারিয়েই মেহেদি হাসান মিরাজের দলের যাত্রা শুরু। এরপর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ রানের জয়। আর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নামিবিয়াকে আট উইকেটে হারিয়ে গ্রুপের সেরা দল হিসেবেই বাংলাদেশ খেলছে শেষ আটে।
যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিতে খেলার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজকেও। বৃহস্পতিবার মিরপুর একাডেমি ভবন মাঠে অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক জানালেন, লক্ষ্যের কাছে এসে আরও মনোযোগী হয়েছে দল।
যুব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ২০০৬ সালে। শ্রীলংকায় সেবার মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরে স্থান নির্ধারণী ম্যাচ জিতে শেষ পর্যন্ত হয়েছিল পঞ্চম। সেই দলটিকে ছাপিয়ে নতুন উচ্চতায় উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।
এদিকে গ্রুপ পর্বে নাজমুল হাসান শান্ত এবং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির দুটি রেকডই নিজেদের দখলে নিয়েছেন। চলমান যুব বিশ্বকাপে এই রেকর্ডটা আরও উপরে নেয়ার সুযোগ শান্ত ও মিরাজের সামনে। তবে কোনো ব্যক্তিগত লক্ষ্য নয়, বাংলাদেশের তরুণদের লক্ষ্য শুধুমাত্র জয়ে।
তবে হেড টু হেডের স্মৃতি অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে নেপালকে। যুব ওয়ানডেতে একবারই নেপালের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। সেটি ২০০২ বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল, আফতাব আহমেদ, নাফিস ইকবালদের নিয়ে গড়া দলকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল নেপাল। ২০০২ বিশ্বকাপে পাওয়া সেই জয়ই এবার নেপাল শিবিরকে আত্ববিশ্বাস যোগাচ্ছে। নেপাল কোচ জগত বাহাদুর তামাতাতো বলেই দিয়েছেন, স্বাগতিকদের হারিয়ে শেষ চারে খেলবে এবার নেপাল।
কোয়ার্টার ফাইনালের আগে নেপাল দল তাদের অধিনায়কের বয়স নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে। তবে তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় তারা। বরং সেই সমস্যা পাশ কাটিয়ে নেপাল কোচ বলেন, ‘আমাদের এই দলটা বেশ ভালো। ছেলেরা কয়েকমাস ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছে। তার ফলাফলও আমরা ইতোমধ্যে গ্রুপ পর্ব পেয়েছি। আমাদের দলে ভালো স্পিনার ও ব্যাটসম্যান রয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে সেরাটা দেয়ারই চেষ্টা করে আমার দল।’
এবার দেখার বিষয়, জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে ইতিহাস গড়তে পারে কি না বাংলাদেশ। নাকি গ্রুপ পর্বের মতো নতুন কোন রূপকথার জন্ম দেবে নেপাল।
সানবিডি/ঢাকা/আহো