পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ৩৮টি কোম্পানি সদস্য সমাপ্ত অর্থ বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের কোন ধরণের লভ্যাংশ দেয়নি। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভালো মুনাফা করেছে। তবে এই তালিকায় আরও কিছু কোম্পানি যুক্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৭৮৫তম কমিশন সভায় কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর পুঁজিবাজারে অভিশেক হয় একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড। কিন্তু তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই শেয়ারহোল্ডারদের কোন ধরণের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পর্ষদ। কোম্পানিটি বাজার থেকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৩ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ওভার দ্য কাউন্টারে (ওটিসি) থাকা চার কোম্পানিকে মূল মার্কেটে নিয়ে এসেছে নতুন কমিশন। ব্যবসায় উন্নতির কারণে ওটিসি মার্কেটের এসব কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেনের সম্মতি দেওয়া হয়েছিলো। কোম্পানিগুলো হলো: তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেড।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিবে বলেন, সদস্য সমাপ্ত বছরে যেসকল কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদেরকে কোন ধরণের লভ্যাংশ দেয়নি, ওই সকল কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
মূল মার্কেটে ফেরার পর বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে মুন্নু ফেব্রিক্স। সদস্য সমাপ্ত বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। যদিও তালিকাভুক্তির পর থেকেই উর্ধ্বমূখী ছিলো কোম্পানির শেয়ারের দরে। এক পর্যায়ে জুন মাসের ৩০ তারিখ সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা উঠে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর। এর পর আবার কমতে শুরু করে। ২৮ অক্টোবর এটির লেনদেন হয় ২৫ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ১১ পয়সা। তবে কোম্পানিটির পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে -আরামিট সিমেন্ট, প্রাইম ফাইন্যান্স,ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড,ফু-ওয়াং ফুডস,জেনারেশন নেক্সট, শ্যামপুর সুগার মিলস,জিল বাংলা সুগার,জুট স্পিনার্স,ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ফাস ফাইন্যান্স,সোনারগাঁও টেক্সটাইল,ইনফরমেশন সার্ভিসেস,মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক,খুলনা প্রিন্টিং,উসমানিয়া গ্লাস শীট, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ,ইস্টার্ন কেবলস,ফার্স্ট ফাইন্যান্স,আরএসআরএম স্টিল,এটলাস বাংলাদেশ, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ,জাহিন স্পিনিং,বেক্সিমকো সিনথেটিকস, দুলামিয়া কটন, স্টাইলক্রাফট,সাভার রিফ্রেক্টরিজ,আজিজ পাইপস,ইয়াকিন পলিমার,মেঘনা পেট,আরএন স্পিনিং,খান ব্রাদার্স,ফাইন ফুডস, সেন্ট্রাল ফার্মা,ওয়েস্টার্ন মেরিন এবং ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
এদিকে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো মুনাফা করতে পারলেও এবারও বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অরামিট সিমেন্ট। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি। লভ্যাংশ না পেলেও শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা আয় করতে পারাটাই এই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পেতে পারেন।
এছাড়া চলতি বছরে আয় করেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড। প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি আয় করেছে ৮ পয়সা। গত বছর আয় ছিল ৫১ পয়সা। সে বছর লভ্যাংশ ছিল ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। এদিকে চলতি বছরে আয় করেও লভ্যাংশ দেয়নি জেনারেশন নেক্সট।
অপরদিকে ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস নেই। প্রায় প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান দেয়া কোম্পানিটি এবারও শেয়ারপ্রতি ৮ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছরে লোকসান ছিল ৭ টাকা ৬৭ পয়সা।
এদিকে লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে টানা তৃতীয় বছর বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ না দেয়ার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাহিন টেক্স। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি ৩ টাকা ১ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর লোকসান ছিল ৩ টাকা ৭৭ পয়সা। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে শেয়ার প্রতি ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানি ফাইন ফুড এবার লোকসানে যাওয়ার পর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি ১১ টাকা ৩ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর মুনাফা ছিল ১৮ পয়সা। অপরদিকে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপস মুনাফা থেকে লোকসানে পড়ে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৮২ পয়সা৷ গত বছর শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ২৬ পয়সা। আগের বছর লোকসানে থাকার পরও নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা বিবিধ খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স এবারও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল ৯ পয়সা। ওই বছর ২ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশ পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
এছাড়া মুনাফা থেকে লোকসানিতে পরিণত হওয়া কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার এবার লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটি গত বছরের জুলাই থেকে চলতি জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৫৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ পয়সা। একইভাবে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে অলটেক্ম ইন্ডাস্ট্রিজ। লোকসানি এই কোম্পানিটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ৫ টাকা ৮ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ১০ টাকা ৩১ পয়সা। এদিকে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে আইএসএন। এই কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পর লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি কোম্পানিটি লোকসান দিয়েছে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১৮ পয়সা।