১৯৩৩ সালে জন্ম হয়েছিল বেটি মোরেলের। জন্মের মাত্র ছয় মাসের মাথায় মায়ের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। তারপর এক দম্পতি তাকে দত্তক নিলে তাদের ঘরেই মানুষ হয় বেটি। পালক পিতা-মাতারও মৃত্যু হয় একসময়। এরপর থেকেই নিজের জন্মদাত্রী মা’কে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেটি। ওদিকে মায়েরও বিয়ে হয়েছে দুবার। আরও সাত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রথম জন্ম দেয়া মেয়ের দেখা আর পাননি। এভাবেই কেটে গেছে আট যুগেরও বেশি সময়, নির্দিষ্ট করে বললে ৮২ বছর! তবে হাল ছাড়েননি বেটি।
তাই ৮২ বছর পর এসে দেখা পেয়েছেন জন্মদাত্রী মায়ের। গত মাসে নিউ ইয়র্কের গ্রেটার বিংহ্যামটন এয়ারপোর্ট সাক্ষী হয়েছে এই অবিশ্বাস্য মিলনের। সিএনএনের সহযোগী ব্লগ ডাব্লিউবিএনজি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই হৃদয়স্পর্শী মিলনের কাহিনী। ১৯৩৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের ইউটিকার এক হাসপাতালে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন লেনা পিয়ার্স। তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। সন্তানের নাম রাখেন ইভা মে। ছয় মাস লালন-পালনও করেন তিনি ইভাকে। কিন্তু এরপরই আসে বিচ্ছেদের মুহূর্ত। এত অল্প বয়সে পিয়ার্স মাতৃত্বের জন্য উপযোগী নয়- এমন অভিযোগে নিউ ইয়র্ক স্টেট পিয়ার্সের কাছ থেকে নিয়ে নেয় ইভাকে। পরে লং আইল্যান্ডের এক দম্পতি দত্তক নেয় তাকে। সেখানেই বেটি মোরেল নামে বেড়ে উঠতে থাকেন ইভা।
পালক পিতা-মাতার ঘরে অন্য কোনো ভাইবোনও ছিল না তার। ২১ বছর বয়সে ইভার পালক মায়ের মৃত্যু হয়। এর কয়েক বছর পর তার পালক পিতাও মারা যায়। এরপর থেকেই মূলত জন্মদাত্রী মায়ের সন্ধান শুরু হয় বেটি ওরফে ইভার। এর মধ্যে তার নাতি-নাতনীরও জন্ম হয়েছে। এর মধ্যেই পেরিয়ে গেছে আরও ৫০ বছর। এদিকে লেনা পিয়ার্স থেকে গিয়েছিলেন আগের জায়গাতেই। দুবার বিয়ের বন্ধনে জড়ান তিনি। আরও সাত সন্তানের জন্ম দেন পিয়ার্স। কিন্তু মনে মনে সবসময়ই সন্ধান করে গেছেন তার প্রথম সন্তানকে। দত্তক হওয়ার কারণে তার কোনো সন্ধান পাননি তিনিও।
পিয়ার্স বলেন, ‘সে বড় হচ্ছিল কোথাও। আমিও বুড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’ এর মধ্যেই মায়ের সন্ধান চালিয়ে যেতে থাকেন বেটি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে বেটির এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বেটি জানতে পারেন জন্মের সময় তার নাম ছিল ইভা। আরও জানতে পারেন, তার জন্ম হয়েছিল ইউটিকায়। এই তথ্যই যেন বেটির ৮২ বছরের সন্ধানকে সার্থক করে তোলার ক্লু দেয়। প্রথমেই তিনি ইউটিকার দুই হাসপাতালে ফোন দেন। জানতে চান ওই হাসপাতালগুলোতে ১৯৩৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি কাদের জন্ম হয়েছিল। এক হাসপাতাল থেকে জানা যায়, ওই দিন দুটি শিশুর জন্ম হয়েছিল। তার মধ্যে একজন ছিল মেয়ে, নাম ইভা মে। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে ইভার জন্মসনদ নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তার নাতনির সহায়তায় তিনি অনলাইনেও বিভিন্ন সাইটের সূত্র ধরে খোঁজখবর করতে থাকেন। একটা সময় গিয়ে তিনি সন্ধান পান লেনা পিয়ার্সের আরেক মেয়ে মিলির। তার মাধ্যমেই প্রথমে কথা হয় ফোনে।
মোরেল বলেন, ‘কোনো যোগাযোগই ছিল না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জানতে পারলাম সে জীবিত। কথা হলো তার সঙ্গে। মনে হলো, এবারে আমার জীবন সম্পূর্ণ।’ এরপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মা-মেয়ে মুখোমুখি ৮২ বছরের পর। বিমানবন্দরের লবিতে অশ্রুসিক্ত দুজন। পিয়ার্স বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। এত দিন পেরিয়ে গেছে, শেষ পর্যন্ত আবার ওকে দেখতে পাবো। ওই দিনটা নিশ্চয়ই খুব সুন্দর একটা দিন হবে।’ অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মা-মেয়ের মিলন ৮২ বছরের পর। বিমানবন্দরের লবিতে অশ্রুসিক্ত দুজন। মোরেল বলেন, ‘আমি আর একা নই। আমার এখন মা আছে, ভাই-বোন আছে। এটা পরাবাস্তবের মতো। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেছে একত্রিত হতে পারাটা সত্যিই অনেক আনন্দময়।’