বাংলাদেশ থেকে সিনথেটিক জুতা ও খেলাধুলায় ব্যবহৃত 'স্পোর্টস' জুতার রপ্তানি গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ২০ শতাংশ করে বাড়ছে। বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা বাড়ার কারণেই মূলত রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে নন-লেদার (চামড়া ছাড়া অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি) ফুটওয়্যার রপ্তানি থেকে ১৩৩ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্জিত ১২৭ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে এ বছরের অর্জন প্রায় ৪ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই খাত থেকে গত বছর রপ্তানি আয় ছিল ৩৪৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার। এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাত থেকে অর্জিত ২৪৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি, যা খুবই ইতিবাচক একটি ধারা।
সম্প্রতি ফিলা, গ্রেসল্যান্ড, জেনি ফেইরি, ডেনালি শুজ, বেন শেরম্যান, হুগো বস, এইচঅ্যান্ডএম, ডেকাথলন, স্টিভ ম্যাডেন, কাপ্পা, স্কেচার্স ও পুমার মত বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ওয়ার্ক অর্ডারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এই খাতের রপ্তানির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শ্যুনিভার্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে তৈরি সিনথেটিক জুতার গুণগত মান ও ন্যায্য দামের কারণে এর রপ্তানি বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'যেহেতু দেশে নন-লেদার ফুটওয়্যার খাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি, আমরা দেশের মূল রপ্তানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাকের বিকল্প হিসেবে এটিকে গড়ে তুলতে পারি।'
যদিও সিনথেটিক ফুটওয়্যার এখন দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প, বড় মাপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই খাতের প্রতি আগ্রহ এখনও ন্যুনতম পর্যায়ে।
রিয়াদ মাহমুদ বলেন, 'এই শিল্পে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিচারে, আরও পেশাদার ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো এ ব্যবসায় এলে ভালো করতে পারবে।'
শ্যুনিভার্সের ফুটওয়্যার রপ্তানি থেকে আয় গত ৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ২৯ দশমিক ১৯, ৪৯ দশমিক ২৮ ও ৪০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর রিয়াদের সঙ্গে একমত হয়ে জানান, রপ্তানির ক্ষেত্রে নন-লেদার ফুটওয়্যার এখন চামড়ার জুতার চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।
এই দাবির স্বপক্ষে বলা যায়, সিনথেটিক ফুটওয়্যার নির্মাতারা চলমান করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও ভালো করেছেন।
সারা বিশ্বে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রথাগত চামড়ার জুতার চেয়ে সিনথেটিক অথবা নন-লেদার ফুটওয়্যারকে বেশি পছন্দ করার প্রবণতার কারণেই মূলত এ ধরনের জুতার চাহিদা বেড়েছে।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার গত বছর ৫ লাখ জোড়ার চেয়েও বেশি নন-লেদার জুতা রপ্তানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, আগামীতেও তাদের রপ্তানির পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকবে।
ম্যাফ শুজ নামের আরেকটি দেশি সিনথেটিক ফুটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দৈনিক ৫০ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত উল্লাহর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারাও সন্তোষজনক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখছেন।
এই খাতের অপার সম্ভাবনা চিন্তা করে সরকার স্পোর্টস ও সিনথেটিক ফুটওয়্যার রপ্তানিকে সর্বশেষ রপ্তানি নির্দেশনায় প্রাধান্য দিয়েছে।
এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই প্রণোদনার পরিমাণ আরও ৪ শতাংশ বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে সিনথেটিক ও নন-লেদার ফুটওয়্যার পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ম্যাফ শ্যুজ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে এবং এটি শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি প্রতিষ্ঠান। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা এই খাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে বলেও শাহাদাত দাবি করেন।
গত অর্থবছরে সার্বিকভাবে দেশের স্পোর্টস শ্যুজ রপ্তানি থেকে অর্জিত ৩৪৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ শতাংশই এই প্রতিষ্ঠান অর্জন করেছে। ২০২১ অর্থবছরে তারা যথাক্রমে ১ কোটি ৫০ লাখ জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে।
উদ্যোক্তা শাহাদাত উল্লাহ আশা করছেন এ বছর ২ কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি করতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি স্টার
এএ