২৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-১২-০৯ ১৭:৪৫:৫৬


পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমাখাতের প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল তদন্ত করে। ডেল্টা লাইফের ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়।

‘ভ্যাট গোয়েন্দা দল তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিল করা বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমা করা ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।’

ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বিমার উপর এক কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে।

এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ আট কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৪ টাকার ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১০ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৮৫৩ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

তদন্ত অনুসারে নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি উৎসে ভ্যাট ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৮০৩ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫২ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ৫৮৯ টাকার ফাঁকি উদঘাটিত হয়।

উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৭ টাকা সুদ আদায়যোগ্য হবে।

অন্যদিকে, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৩ কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৯১ টাকা পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকির উপরও আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১২ লাখ ৯ হাজার ২৫০ টাকা সুদ প্রযোজ্য হবে।

তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ টাকা। এছাড়া সুদ বাবদ ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৭৯৯ টাকাসহ সর্বমোট ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

মইনুল খান জানান, তদন্তে আরও দেখা যায়- প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহার করা ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মূসক সার্কেল, বিভাগীয় দপ্তর, কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়মিত নজরদারির জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

এএ