বরিশালে পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার সাতটি ধাপে উর্ত্তীণ হওয়ার পর মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও আছপিয়া ইসলাম কাজল নামে এক তরুণীর চাকরি হয়নি। এ নিয়ে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে দেখা করেও কোনো কাজ হয়নি। শেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরেছেন আছপিয়া।
পুলিশের বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, চাকরির বিধিমালা অনুসারে আবেদনকারী আছপিয়া যোগ্য না হওয়ায় তার চাকরি হয়নি।
জানা গেছে, বরিশালের হিজলা উপজেলার সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আছপিয়া ইসলাম কাজল। মা, তিন বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে আছপিয়া বড়জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর জমিতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করছেন। তার বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।
২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আছপিয়ার পরিবারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী হিজলা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস জানান, আছপিয়ার বাবা মারা গেছেন। তিনি মা ও ভাই-বোন নিয়ে হিজলায় বসবাস করেন। কিন্তু তাদের মূল বাড়ি হিজলায় নয়। তাদের মূল বাড়ি হচ্ছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। সেখানে তার দাদার নামে জমি আছে। কিন্তু অতদূর আমাদের খতিয়ে দেখার বিষয় না। তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা কিনা সেটি তদন্ত করা হয়। আমি তদন্তে পেয়েছি আবেদনকারী বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। সেটি উল্লেখ করেছি। বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আছপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, যেকোনো বিবেচনায় হোক আমাকে চাকরিটি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। এতে আমার সংসারের দুঃখ মোচন করতে পারব। আমার মায়ের দুঃখ ঘোচাতে পারব। আমরা হিজলায় ভূমিহীন হলেও সব পরীক্ষায় আমি পাস করেছি। যদি যোগ্য হই তাহলে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।
পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, চাকরি হয়েছে জেলাভিত্তিতে। যার সভাপতি সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার। আমি ডিআইজি। আমার কাছে অনেকেই বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। মেয়েটি জানতে পেরেছে তার বরিশালে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় নাকি তার চাকরি হচ্ছে না। সে জানতে এসেছিল। সে জানিয়েছে, তার বাবা-মা দুজনই ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবা-মায়ের বরিশালে কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। মানে জমি নেই। আমি তাকে ভেরিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি। পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। পুলিশ সুপারকে তার বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে বলেছি। বরিশালের সিডিকে বিষয়টি জানিয়েছি। আছপিয়ার বিষয়টি পুলিশে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাজে দেবে বলে মনে করি।
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, যেহেতু আছপিয়া সাতটি স্তর পাস করেছে। আমরা তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
এএ