[caption id="attachment_17099" align="aligncenter" width="640"] ছবি: প্রতিকী[/caption]
‘আমি যখন বড় হব, মাকে নিয়ে চলে যাব অন্য কোথাও—বাবার কাছ থেকে অনেক দূরে। কারণ, আমার বাবা খুব বাজে লোক।’ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্রীর লেখা রচনায় এভাবে উঠে এসেছে তার মনের ক্ষোভের কথা। রচনার বিষয় ছিল: ‘মাই ফ্যামিলি’।
ক্লাসে সব সময় শান্ত-শিষ্ট বলে পরিচিত মেয়েটি নিজের পরিবার নিয়ে এ রচনায় মনের যাবতীয় ক্ষোভ তুলে ধরে আরও লিখেছে, ‘আমার বাবা খালি মাকে মারে। মা আর আমি রোজ রাতে কাঁদি। আমাদের কথা কেউ শোনে না, এমনকি মামারাও। বাবা আমাকেও মারে। এটাই আমার পরিবার।’
ক্লাসের অন্যরা যখন মজা করে তাদের পরিবারের কথা লিখেছে, তখন এই মেয়েটির লেখা দেখে শিক্ষকেরা অবাক। শ্রেণিশিক্ষক ভাবতেও পারেননি, মেয়েটির মনে এতটা তীব্র যন্ত্রণা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। বিষয়টি নিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলাপ করলাম। ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শকের সঙ্গেও কথা বলি।’
মেয়েটির সঙ্গে আলোচনায় কয়েক দফা কাউন্সেলিংয়ের পর তার মা-বাবাকে ডেকে পাঠায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আলাদা থাকতে বলা হয়, যত দিন না মেয়েটির বাবা দূরত্ব ঘোচাতে সমর্থ হন। একই সঙ্গে মেয়েটি যেন বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ফিরে পায় সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়।
মনস্তত্ত্ববিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, মেয়েটির ওই লেখাকে শিশুসুলভ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে নিজের দমিত অনুভূতি প্রকাশ করেছে ওই রচনায়। আর কোনো উপায় তার ছিল না।
কলকাতার মনস্তত্ত্ববিদেরা বলছেন, জীবনে কিছু ‘অন্ধকার অধ্যায়’ থাকে। এসব কথা খুব কাছের বন্ধুকেও বলা যায় না। লিখে ফেলাটা বরং সহজ বিকল্প।
ছাত্রীটি নিজের বিদ্যালয়ের পরিবেশে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বলে মনে করেন মা-বাবার করণীয় বিষয়ের পরামর্শক পায়েল ঘোষ। তিনি বলেন, এই কারণে হয়তো সে মনোবেদনার কথাগুলো লিখতে দ্বিধা করেনি।