দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার, কোম্পানি সচিব আসাদুর রহমান, সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুকসহ তিন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বৈঠকের বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার সানবিডিকে বলেন, ডিএসইর অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কমিশনের সাথে বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করা) কাজের অগ্রগতি, ডিএসইর প্রশাসনিক রেগুলেশেন বাস্তবায়নের কী অবস্থা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, গত অক্টোবর মাসে ডিএসইর পর্ষদ সভায় ডিএসইকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর পর বিষয়টি বিএসইসিকে একটি পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়। সেই বিষয়ে একটি সুনিদৃষ্ট প্রস্তাব বিএসইসিতে জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা পর্ষদের সাথে আলোচনা করে নির্ধারিত সময়ে বিএসইসিতে প্রস্তাবনা জমা দিবো।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিকে বলেন, মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করার আইনের একটি বিষয় ছিলো ৬০ শতাংশ শেয়ার বাহিরে ছেড়ে দিতে হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শেয়ার ইতোমধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। বাকী ৩৫ শতাংশ শেয়ার এখনো ডিএসইর কাছে আছে। এই শেয়ারগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। সেই বিষয়ে ডিএসইসি এবং সিএসইসিকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধ্বস হওয়ায় সরকার একটি তদন্ত কমিটি করে। ওই কমিটি তার প্রতিবেদনে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা) করার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে মালিকানা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেই লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন করা হয়। আইনে শতভাগ মালিকানা থেকে ডিএসই’র বর্তমান সদস্যদের মালিকানা রাখা হয় ৪০ শতাংশ। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হয় ৩৫ শতাংশ শেয়ার।
আইন অনুযায়ী, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ২০১৮ সালের ১৪ মে চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি সই করে ডিএসই। ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোটকে নিটা অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়। ২০১৮ সালে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোট ডিএসইর ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনেছে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২১ টাকা দরে মোট ৯৬২ কোটি টাকা পরিশোধ করে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোট। ডিএসইর শেয়ারের বিপরীতে চীনা জোটের দেওয়া অর্থ ডিএসইর সদস্য ব্রোকারদের ভাগ করে দেওয়া হবে। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চীনা কনসোর্টিয়ামের পক্ষে ডিএসইর পরিচালক হলেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাই।
ওই সময়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। কারণ আজকের এই চুক্তির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আন্তর্জাতিক শেয়ার মার্কেটে পরিণত হতে যাচ্ছে। আজ সকালে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের বিও এ্যাকাউন্টে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং জোটটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বাবদ (৯৬২ কোটি টাকা) পরিশোধ করেছে।