সংসারে সাধু এবং অসাধুর মধ্যে পার্থক্য হলো, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট। রবীন্দ্রনাথের কথা। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক আমলে ডেইলি স্টার শুধু নয়, সকল পত্রিকায় আমরা রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির কথা পড়েছি। ঢালাওভাবে। প্রতিযোগিতা হয়েছে রীতিমতো। আজ মাহফুজ আনাম স্বীকার করলেন বলে তিনি দোষী এবং যাঁরা স্বীকার করলেন না, তাঁরা নিষ্পাপ! তখন সব পত্রিকা তো বটেই, সব টেলিভিশন চ্যানেলেও এসব খবর দেদারছে প্রচারিত হতো। আজ তাঁদের সবাই মাহফুজ আনাম-বধে নেমেছেন।
মাহফুজ আনাম স্মার্ট সম্পাদক। ডেইলি স্টারের মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, জংগীবাদ-বিরোধী অবস্থান ঈর্ষনীয়। রামুর ঘটনায়, হেফাজতের তাণ্ডবে, মুক্তিযুদ্ধের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন করায় ডেইলি স্টার যা করেছে, সাংবাদিকতার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশংসা না করে উপায় নেই।
আবার মোহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে বা সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ডেইলি স্টারের অবস্থান সমর্থন করি না। মাহফুজ আনামের মতো স্মার্ট সম্পাদকের কাছ থেকে কারো দেয়া তথ্য যাচাই না করে ছাপানো কাম্য নয়। এই কাজ সাংবাদিকতার মৌলনীতির পরিপন্থী।
বিশেষ করে রাজনীতির বিপরীতে অন্য কোনো পথে ক্ষমতায় আসাকে যেসব খবর সমর্থন করতে পারে বা করে, এমন কোনো খবর অবশ্যই যাচাই না করে ছাপানো ঠিক না। স্রেফ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দায়বদ্ধতার জন্যই। সেজন্য সমালোচনা তাঁর হতেই পারে। হওয়া উচিত।
আসলে আরো আগেই হতে পারতো। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, যেসব পত্রিকা (আসলে সব পত্রিকাই) একই কাজ করেছে, তারা যেহেতু স্বীকার করেনি, তাই ঢালাওভাবে কেবল মাহফুজ আনামকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। এখানে আমার আপত্তি। এটা তো বেশিদিন আগের কথা না। আমাদের সবার স্মৃতিতে আছে। শুধু মাহফুজ আনাম একা এই কাজ করেছেন, আমি মানতে রাজি নই।
বরং আমি দেখি, মাহফুজ আনামের দোষ স্বীকার করার মধ্য দিয়ে এই বিষয়ে আলোচনার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই 'একমাত্র' ভিলেন বধ না করে, সকল ভিলেনকে জবাবদিহিতায় আনা হোক। কেনো তাঁরা এই কাজটি করেছিলেন, বা যখন যে সরকার আসে, কেনো তাদের পক্ষে-বিপক্ষে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে যান পেশাদারিত্বকে চুলোয় চড়িয়ে, আলোচনাটা সেদিকে হলে ভালো হয়।
এই আলোচনাটা জোরেশোরে হোক। নয়তো 'একমাত্র' দোষীকে শূলে চড়িয়ে বাকি নিরানব্বই 'দোষী' পার পেয়ে যাবেন এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে।
'একমাত্র' পাপীকে ঘৃণা করে সিস্টেমের পাপকে উচ্ছেদ করা যাবে না, ধামাচাপা দেয়া যাবে মাত্র।
[আমাদের মাস্টার্সের রিসার্চ মেথডোলজির শিক্ষার্থীরা কিন্তু গণমাধ্যমে কিভাবে সেইসব খবর এসেছিলো, সে'বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে পারেন]