পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এসপিসিএল) মুনাফায় গত দেড় বছরে বড় ধরনের উঠা-নামা হয়েছে। কোম্পানিটির আয়ে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড। পেট্রোম্যাক্সের ব্যবসার ভালোমন্দের সঙ্গে শাহজিবাজার পাওয়ারের মুনাফাও ব্যাপকভাবে উঠা-নামা করছে।
এদিকে শাহজিবাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির পরিবর্তে দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করায় গত মাসে পেট্রোম্যাক্সের মুনাফা ব্যাপকভাবে কমেছে। এর প্রভাবে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে শাহজিবাজার পাওয়ারের। কারণ দেশের বাজারে কনডেনসেট (প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত) নামের এই কাঁচামালের দাম বিদেশের বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে তারা আবার বিদেশ থেকে কনডেনসেট আমদানি শুরু করেছে। তাই চলতি হিসাব বছরের বাকী দুই প্রান্তিকে পেট্রোম্যাক্সের মুনাফা বাড়বে। তাতে শাহজিবাজার পাওয়ারেরও মুনাফা এবং ইপিএসব বাড়বে।
আজ সোমবার কোম্পানির ৮ম বার্ষিক সাধারণ সভায় শাহজিবাজার পাওয়ারের চেয়ারম্যান রেজাকুল হায়দার এসব কথা বলেন। খামারবাড়ির কেআইবি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ, দেশে বেসরকারি খাতে বড় জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় পরিশোধনাগার পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারির ৪৯ ভাগ শেয়ারের মালিক শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। পেট্রোম্যাক্স মূলত আমদানি করা কনডেনসেট পরিশোধন করে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করে থাকে। আমদানির অনুমতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কয়েক মাস কোম্পানিটি স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সংগৃহীত কনডেনসেট দিয়ে উৎপাদন চালু রাখে।
এজিএমে শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির চেয়ারম্যান রেজাকুল হায়দার বলেন, দুটি কারণে পেট্রোম্যাক্সের আয় কমেছে। প্রথমত সরকার গত বছরের শুরুর দিকে দেশীয় রিফাইনারিগুলোর কাছ থেকে কেনা তেলের দাম কমিয়েছ। কিন্তু সে অনুপাতে কনডেনসেটের দাম কমানো হয়নি। এখন বিশ্ববাজারে কনডেনসেটের দাম অনেক কম। আমরা বিদেশ থেকে এই কাঁচামাল আমদানি করে থাকি। মাঝখানে ৬ মাস আমাদের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ ছিল। এই বন্ধ থাকার কারণে আমরা স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করতাম। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমে যায়। আবার স্থানীয়ভাবে বেশি দরে কাঁচামাল কিনতে হয়েছে বলে উৎপাদন ব্যয়
আশার কথা হলো, আমরা আবার কাঁচামাল আমদানি করার অনুমতি পেয়েছি। এখন আবার কোম্পানির আয় বেড়ে যাবে কোম্পানির ব্যাংক ঋণ অনেক কমে এসেছে। ২ বছর পর আর ঋণ পরিশোধে টাকা ব্যয় করতে হবে না। তখন কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় আরও বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, কোম্পানির ভবিষ্যৎ অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা এটাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিবে।
কোম্পানি সচিব ইয়াসিন আহমেদের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ আলম, পরিচালক আনিস সালাহউদ্দিন, একেএম বদিউল আলম, মো. শামসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন ২০১৫ সমাপ্ত হিসাব বছরে শাহজিবাজার পাওয়ার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ছিল ২৮ শতাংশ নগদ এবং বাকী ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৭ টাকা ২০ পয়সা। শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়ায় ৩০ টাকা ৬০ পয়সা।
গত দেড় বছরের তথ্য-পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, পেট্রোম্যাক্স ভালো করলে শাহজিবাজারের ইপিএস অনেক বেড়ে যায়। আবার পেট্রোম্যাক্স খারাপ করলে শাহজিবাজারের আয় অনেক কমে যায়।
২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে শাহজিবাজারের শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯১ পয়সা। তখন পর্যন্ত পেট্রোম্যাক্স উৎপাদনে যায়নি। পরের বছর কোম্পানিটি উৎপাদনে যাওয়ায় শাহজিবাজারের ইপিএস এক লাফে বেড়ে ৭ টাকা ২০ পয়সায় উঠে আসে। এ সময়ে কোম্পানির মূল ব্যবসা থেকে শেয়ার প্রতি আয় হয় ২ টাকা ২৮ পয়সা মাত্র।
অন্যদিকে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে স্থানীয় উৎস থেকে বেশি দামে কনডেনসেট কিনতে হয়েছে বলে পেট্রোম্যাক্সের মুনাফা ব্যাপকভাবে কমে যায়। তাতে কমে শাহজিবাজারের ইপিএস। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে শাহজিবাজার পাওয়ারের সমন্বিত ইপিএস হয় ২ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ টাকা ৫৬ পয়সা।
কোম্পানিটি ফের কনডেনসেট আমদানি শুরু করায় হিসাব বছরের বাকী দুই প্রান্তিকে আগের দুই প্রান্তিকের চেয়ে বেশি মুনাফা করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো