মহামারি করোনা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এবং চাকরিচ্যুত হয়ে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে বলে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাত। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রিকশাচালক শহর ছেড়েছেন। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কেউ ব্যবসায় লোকসান দিয়ে মূলধন হারিয়েছেন।
আজ বুধবার (২২ ডিসেম্বর) অর্থনীতি সমিতির ২১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডে সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আবুল বারকাত।
এ সময় তিনি বলেন, যারা গ্রামে চলে গেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক লোকের শহরে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও কর্মসংস্থান বাড়েনি। মজুরি বা আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে বাজারে পণ্যমূল্যও ঊর্ধ্বমুখী। এর ফলে নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ছয় কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছেন। তবে এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও দেশের এক শ্রেণির লোক অতি ধনী হয়ে গেছে, যার কারণে দেশে বড় আকারের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। বহু অভিবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। এতে রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা লেগেছে।
শিক্ষা খাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম এলোমেলো হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়বে তাদের ভবিষ্যতের ওপর। সংকটকালীন অভিজ্ঞতা তাদের বিপ্লবের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আবুল বারকাত বলেন, ছোট ও অতি ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। কিন্তু বড় শিল্পগোষ্ঠী প্রয়োজনের বাইরেও ঋণ নিচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো করপোরেট গ্যারান্টি দিয়ে ঋণ হাতিয়ে নিচ্ছে। যদিও দেশের আইনে করপোরেট গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। দেশে যতগুলো বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ উদ্যোক্তা নানা উপায়ে সরকারি ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যাংকের মালিক হয়েছেন। অনেকে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে তা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এগুলো দৃশ্যমান থাকলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
সানবিডি/এনজে