সংঘর্ষ, হামলা, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে পঞ্চম ধাপে ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এসব ইউনিয়ন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় পাঁচ জেলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চাঁদপুর
চাঁদপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন কচুয়ার ও আরেকজন হাইমচরের। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে সহিংসতায় তারা মারা যান। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বুধবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, কচুয়া উপজেলার সাচার এলাকায় নিহত যুবকের নাম শরীফ হোসেন। তার বাবার নাম শহীদ উল্লাহ। দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলকালে ছুরিকাঘাতের শিকার হন শরীফ। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাহেরচরে বিকেল সাড়ে ৩টায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে একজন মারা গেছেন। তার নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুরের বাসিন্দা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
হাইমচর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোল্লা বলেন, নীলকমল ইউনিয়নে একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
মানিকগঞ্জ
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় ছলেমন খাতুন (৫০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ওই নারীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ছলেমন খাতুন উপজেলার বাচামারা গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী।
জানা গেছে, বুধবার দুপুরের দিকে ছলেমন খাতুন ভোট দিতে বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে যান। এ সময় ৫ নং ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে ওই নারী হার্ট অ্যাটাক করেন।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরুল হাসান বলেন, বাচামারা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে দুই সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই নারী ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন। সংঘর্ষের কবলে পড়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর সিংহরা ওয়ার্ডে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অংকর দত্ত (৩৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে সিংহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত অংকুর সিহংরা গ্রামের দত্ত বাড়ির নেপাল দত্তের ছেলে এবং টিউবয়েল প্রতীকের সদস্য প্রার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাসের সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার।
তিনি বলেন, অংকুর দত্তকে আপেল প্রতীকের সদস্য প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে কিলঘুষি মারে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বগুড়া
বগুড়ার গাবতলীর রামেশ্বরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন (৪০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাইগুলি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
গাবতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম। প্রতিপক্ষের হামলায় জাকির আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে বিকেল ৩টার দিকে মৃত্যু হয় তার। জাকির জাইগুলি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা।
এলাকাবাসী জানায়, দুই সদস্য প্রার্থী ফেরদৌস হাসান মিঠু ও সাহিদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দুপুর ২টার দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাহিদুল ইসলামের সমর্থক ছিলেন জাকির হোসেন।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে জাকির সেখানে ভিডিও করার সময় প্রতিপক্ষের লোকেরা তার ওপর হামলা চালায়। তার মাথায় ও পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে জাকিরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুব আলম জানান, অধিক রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবু তাহের (৪৩)। তিনি একই ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের ওমর আলীর ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, ভোটগ্রহণ চলাকালে বিকেলে পৌনে ৩টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্য প্রার্থী আইজল মিয়ার (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থী রাসেল আহমেদের (পাখা প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মী-সমর্থকরা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। গুরুতর অবস্থায় রাসেলকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, আমার জানা মতে নির্বাচনী সহিংসতায় আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
সানবিডি/ এন/আই