প্রণোদনার ঋণের অর্থ ফেরত দিতে আরও সময় চেয়েছে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। ঋণের বাকি ১৪ কিস্তি দিতে ৪২ মাস সময় চেয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময়ের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু দাবি জানানো হয়েছে।
একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করে কারখানাগুলো। কিন্তু উদ্যোক্তারা পোশাক তৈরির জন্য তুলা, সুতা, কাপড়, রাসায়নিকসহ অন্যান্য কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে কনটেইনারের সংকট ও আকাশচুম্বী ভাড়া, সুতার দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়া, চীনে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি কারণে তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ বহু গুণে বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি।
বিকেএমইএ সভাপতি আরও লিখেছেন, সংকটকালেও তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ফলে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে রপ্তানি আদেশ আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জাহাজ ও কনটেইনার সংকটের কারণে রপ্তানি পণ্য সময় মতো জাহাজীকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত করছে। ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যছাড় দেওয়াসহ নানা শর্ত আরোপ করছে।
করোনাকালের প্রথম ঢেউয়ের সময় শ্রমিকদের মজুরি দিতে প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করে সরকার। সেই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে দেড় হাজারের বেশি রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের মালিক শ্রমিকদের চার মাসের মজুরি পরিশোধ করেন। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধে মালিকরা সময় চাইলে সরকার মেনে নেয়। সেই সময় শেষে ঋণ পরিশোধ শুরু করেছেন মালিকরা। তবে আবার ঋণ পরিশোধে সময়ও চাইছেন পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা।
এছাড়া নিট কারখানার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে সর্বোচ্চ তিন কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার দাবি অনুরোধ জানিয়েছেন বিকেএমইএর সভাপতি। তিনি দাবি করেন, কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি হলেও তার বিপরীতে ক্রেতারা নিদিষ্ট সময়ে অর্থ না দেওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। বর্তমান ইডিএফ থেকে সর্বোচ্চ দুই কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন পোশাক শিল্পের মালিকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইডিএফ থেকে ঋণের অর্থ পরিশোধে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান বিকেএমইএর সভাপতি। একইসঙ্গে তিনি সব ধরনের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দেওয়ার ঋণ সীমা (ব্যাক টু ব্যাক ক্রেডিট লিমিট) ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এএ