ভারতের অর্থনীতিতে টেক্সটাইল শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভারতের টেক্সটাইল ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি কমেছে অন্তত তিন শতাংশ এবং ২০২০ সালে এর হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মতো সাশ্রয়ী দেশগুলো ব্যবসা করেছে আশাতীত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস ভারতের টেক্সটাইল শিল্পে এমন বিপর্যয়ের কারণ এবং এই সংকট থেকে উত্তরণে, অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভিয়েতনামকে টেক্কা দিতে দেশটি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন করেছে। সোমবারের ওই প্রতিবেদনে প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাড়তি খরচ ভারতের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বড় সমস্যা। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি।
প্রধান আমদানিকারকদের সঙ্গে ভারতের মুক্ত অথবা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির অভাব রয়েছে। পোশাকের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি না থাকা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।
ভারতে উচ্চ মূলধন ব্যয় এবং প্রায় সব টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির আমদানিনির্ভরতা সন্তোষকজনক মুনাফা অর্জনকে কঠিন করে তুলেছে। চীনা প্রস্তুতকারককের তুলনায় উৎপাদনে বাড়তি সময় নেওয়া ভারতকে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনামূলক নিকটবর্তী উৎপাদনকেন্দ্রে বিনিয়োগের প্রবণতাও ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত ভারতের জন্য কিছুটা উপকারই করেছে। ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি, অর্থাৎ শুধু চীননির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা ভারতীয়দের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতের যৌগিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) আট থেকে নয় শতাংশ হওয়া উচিত। সেটি হলে ২০২৬ সাল নাগাদ দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি সাড়ে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য আরও বড়। তারা আগামী পাঁচ বছরে দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিতে চায়।
এসব লক্ষ্য পূরণ হলে ভারতে শুধু টেক্সটাইল শিল্পেই নতুন করে ৭৫ লাখ থেকে এক কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। সেখানে এ শিল্পে বর্তমানে সাড়ে চার কোটি মানুষ সরাসরি জড়িত। অর্থাৎ, টেক্সটাইল শিল্পে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি ভারতীয় অর্থনীতির জন্য বড় অর্জন হবে।
সানবিডি/এনজে