রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি কৌশল অনুসরণ করে ২০২১-২০২৪ মেয়াদে রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানি নীতির খসড়া অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, রপ্তানি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুষ্ঠু ভারসাম্য আনা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। এছাড়াও রপ্তানি সহায়ক পরিবেশের ক্রমাগত কাঙ্খিত উন্নয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যে গতিশীলতা আনা, বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সুদৃঢ় করাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যমূলক নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় রপ্তানি নীতি-২০২১-২০২৪ প্রণীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮-২০২১ মেয়াদে প্রণীত ত্রি-বার্ষিক রপ্তানি নীতির মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। রপ্তানি নীতি-২০২১-২০২৪ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রপ্তানি নীতি-২০১৮-২০২১ কার্যকর থাকবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিশ্বে বাংলাদেশের পজিটিভ ইমেজ বিল্ডিং এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’র আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারানো বা সীমিত হওয়া। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিযোগী মূল্যে মানসম্মত রপ্তানি পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং বাজার বহুমূখীকরণ অত্যাবশ্যক। এছাড়া বিকল্প বাজার সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করাও প্রয়োজন।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ বাস্তবায়নে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) পথ প্রদর্শক হিসেবে প্রণীত করেছে সরকার। ৮ম পঞ্চবাষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিও কৌশল বাস্তবায়নে শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্প উৎপাদন, বৈচিত্রময় কৃষিপণ্য, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ, আধুনিক সেবা খাতকে শক্তিশালীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
খসড়া নীতিমালায় পণ্য বহুমূখীকরণের লক্ষ্যে তৈরি পোষাক খাতের (আরএমজি) পাশাপাশি নন-আরএমজি খাত আইসিটি সার্ভিসেস, সফটওয়্যার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও), ট্যুরিজমখাতকে অধিকতর সম্ভাবনাময় সেবাখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ প্রণয়নে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
রপ্তানি নীতিামালার খসড়ায় এলডসিসি গ্রাজুয়েশন মোকাবেলার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিভিন্ন চুক্তির আওতায় প্রদত্ত এস অ্যান্ড ডি সুবিধা আদায়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বিদ্যমান প্রণোদনাগুলো ডব্লিউটিও’র বিধি-বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, পণ্য ও সেবা বহুমুখীকরণে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতে প্রয়োজনীয় নীতি সুবিধা দেওয়াসহ বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণের প্রতি রপ্তানি নীতি-২০২১-২০২৪ এ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ প্রণয়নে দেশের প্রধান প্রধান শিল্প ও বণিক সমিতি, বাণিজ্য সংগঠন, গবেষণা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এবং সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মতামত দেওয়ার সুবিধার্থে প্রস্তাবিত রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ এর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এএ