সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ‘প্রশ্নফাঁস ও প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহকারী চক্রের’ ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত মিরপুর, কাকরাইল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চলা অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।
গ্রেফতারকৃ অন্যরা হলো, নোমান সিদ্দিকী, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। গ্রেফতারের সময় তাদের থেকে ইয়ার ডিভাইস ছয়টি, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ছয়টি, ব্যাংকের চেক পাঁচটি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্ট ফোন ১০টি, ফিচার মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তিনটি সেট জব্দ করা হয়।
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের নিকট তথ্য ছিল পূর্বে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া কতিপয় ব্যক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর বা সমাধান সরবরাহসহ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার ২২ জনুয়ারি ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে কাফরুল থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র এবং উত্তর পত্রের খসড়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যমতে অপর আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী ইতোপূর্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্তে ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেফতার হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত আসামিরা অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে থাকে । এর আগেও তারা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশন সহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে এবং নগদে হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
এএ