মার্কিন বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরেই ডলারের দাম অস্থিতিশীল।বর্তমানে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে হু হু করে বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে টাকার বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থায় মার্কিন এই মুদ্রাটি। সোমবারও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে এর দাম ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছে। আগে ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। ওদিকে গ্রাহকদের ডলার বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো।
নগদ ডলার এখন সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ৯৫ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৯০ টাকা ৫০ পয়সা। আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে ৮৬ থেকে ৮৬ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। এদিকে ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯১ থেকে ৯৫ টাকায় কেনাবেচা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় মুদ্রার বড় অবমূল্যায়ন এটি।
এ ব্যাপারে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। নভেম্বরে ডলারের দাম এসে দাঁড়ায় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। এরপর দেড় মাস একই অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকায়, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্য। ২০২১ সালের ১০ই জানুয়ারি ডলারের বিপরীতে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, একদিকে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আমদানি খরচের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার টিকা। ফলে তিন মাস ধরে বাড়ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম। অর্থাৎ দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। এ ছাড়া করোনার কারণে আমদানির অনেক এলসি’র অর্থ পরিশোধ বকেয়া ছিল। এখন সেগুলো পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে বাজারের ডলারের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্সে সেভাবে ডলারের জোগান বাড়েনি। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা দরে। এখন তা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ তৈরি করতে ডলারের দাম বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে তারাও নিজস্ব উদ্যোগে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করুক।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এর দাম বাড়িয়েছে। নগদ ডলার এখন বিভিন্ন ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ৯৫ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৯০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে কোনো কোনো ব্যাংক এর কমেও নগদ ডলার বিক্রি করছে। এ ছাড়া করোনার পর বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের চলাচল বেড়েছে। এ কারণে নগদ ডলারের চাহিদাও বেড়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা নগদ ডলার নিয়ে আসছেন কম। এ কারণে নগদ ডলারের সংকট প্রকট হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানিকারকেরা সুবিধা পান। কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন কৃত্রিমভাবে ডলার কেনাবেচা করে পরিস্থিতি ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা করা।
সানবিডি/এনজে