রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান তীব্র উত্তেজনা খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যশস্য বাণিজ্যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। অদূরভবিষ্যতে এ অঞ্চলের খাদ্যশস্য রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা।
বৈশ্বিক খাদ্যশস্য বাজারে নেতৃস্থানীয় দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি—সব খাতেই এ দুই দেশের আধিপত্য রয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানায়, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ২০ কোটি ৬৯ লাখ টন গম রফতানি হবে। এর মধ্যে ২৩ শতাংশই রফতানি করবে রাশিয়া ও ইউক্রেন। মোট বৈশ্বিক ভুট্টা রফতানির ১৬ শতাংশই আসবে এ দুই দেশ থেকে। দেশ দুটির মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খাদ্যশস্যের বাজারে। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় চলতি মাসের শুরু থেকেই গমের দাম চাপের মুখে রয়েছে।
এ বিষয়ে গ্লোবাল প্ল্যাটসের দেয়া তথ্যমতে, ২৭ জানুয়ারি ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তিতে ইউক্রেনিয়ান ১১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ গমের মূল্য স্থির হয়েছে টনপ্রতি ৩১৯ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে দাম কমেছে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে এফওবি চুক্তিতে রাশিয়ান গমের মূল্য স্থির হয়েছে ৩২৭ ডলারে। এক মাসের ব্যবধানে কৃষিপণ্যটির দাম কমেছে ৩ শতাংশ।
এদিকে এফওবি চুক্তিতে ইউক্রেনিয়ান ভুট্টার দাম এক মাসের ব্যবধান প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। ২৭ জানুয়ারি প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ২৮৩ ডলার ২৫ সেন্ট। চলমান উত্তেজনার কারণে ইউক্রেনসহ অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ থেকে ভুট্টার সরবরাহ সংকুচিত হওয়ার উদ্বেগ তীব্র হচ্ছে। তার ওপর বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই।
তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এর পরই দুই দেশের গম রফতানি কিছুটা কমে যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময় অন্যান্য অঞ্চলেও রফতানির গতি ছিল মন্থর। তবে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, গম রফতানি কিছুটা কমেছে। তবে প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান বিরোধে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে রফতানিতে নিম্নমুখিতা তৈরি হয়নি।
অন্যদিকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ার গম রফতানি ২৬ লাখ টনে পৌঁছেছে। আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে। ওই সময় ৩২ লাখ টন রফতানি করা হয়। সর্বোপরি চলতি মৌসুমের শুরু থেকে (১ জুলাই ২০২১) ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ার গম রফতানি আগের মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ কমেছে। এ সময় রফতানি করা হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টন গম।
এদিকে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তা এখনো ইউক্রেনের ভুট্টা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেনি। দেশটির ভুট্টার প্রধান রফতানি গন্তব্য চীন। কিন্তু চীনের বাজারে বর্তমানে কৃষিপণ্যটির চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী মাসগুলোয়ও পণ্যটির বাণিজ্যে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
সানবিডি/এনজে