ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনিদির্ষ্টকালের ডাকা ধর্মঘটের কারণে আজ মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দু'দেশের মধ্যে আমদানি- রফতানি বন্ধ রয়েছে। ফলে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকের বেশিরভাগেই বাংলাদেশের শত ভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামালসহ পচনশীল পণ্য রয়েছে।
আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে ও কাস্টমসের সব ধরনের কার্যক্রম সচলসহ দু'দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব পক্ষ আলোচনায় বসলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিএসএফ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বিষয়টি সুরাহা হয়নি। মঙ্গলবার বিকোলে আবার ও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতীয় বিএসএফ ও পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথোরিটির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনসহ একাধিক সংগঠন সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয়। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধে যোগ দেয় পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক।
অভিযোগ উঠেছে- পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংয়ের (ল্যান্ড পোর্ট) নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের। সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, করোনার আবহে এমনিতেই তাদের আয় কমে এসেছে। নতুন ম্যানেজার তাদের সঙ্গে কথা না বলে নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পরিবহন কর্মীরা অভিযোগ উঠেছে যে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে (বিএসএফ) কাজে লাগিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ও কর্মীদের পোর্টের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এসবের প্রতিবাদে এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে কর্মবিরতি শুরু করে ৮টি সংগঠনের কয়েক হাজার শ্রমিক।
ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে। সেই সব নজরে আসতেই বিএসএফ তাদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে।
বিএসএফ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেতে দেওয়া হবে না। কারণ এই ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারকের পণ্যচালান পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে। রফতানির জন্য আসা শত শত ট্রাকও সীমান্তে পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব পণ্যচালানের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্পের অনেক কাঁচামাল রয়েছে। অনেকের শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন তিনি।
সানবিডি/এনজে