সেন্সর বোর্ডের নির্ধারিত আইনকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছে বিতর্কিত চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। যৌথ প্রযোজনার নামে যেসব ছবি তারা নির্মাণ করছে সেগুলোয় আইন বহির্ভূতভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠান ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া’র নাম ব্যবহার করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অগ্নি টু’, ‘আশিকী’, ‘অঙ্গার’- এ তিনটি ছবির ক্ষেত্রেই তাদের আইন না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এ তিনটি ছবি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।
ছবিগুলোর মুক্তির আগে এবং পরে প্রচারণায় প্রযোজক হিসেবে জাজের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রচারের সবগুলো মাধ্যম অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব, স্যাটেলাইট, বিলবোর্ড এবং পোস্টার প্রচারণায় সর্বত্রই প্রযোজনায় ছিল জাজের নাম। অথচ ছবির অফিসিয়াল কাগজপত্রে এসব ছবির কোনোটিরই প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া নয়।
‘অগ্নি-২’ ছবির সেন্সর সার্টিফিকেটে প্রযোজক হিসেবে নাম রয়েছে শহীদুল্লাহ শহিদ নামে একজনের। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে লেখা রয়েছে সাজ্জাদ ট্রেডার্স। ‘আশিকী’ ছবির সেন্সর সার্টিফিকেটে প্রযোজকের নাম মো. ইউসুফ। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম রাবেয়া ট্রেডার্স।
‘অঙ্গার’ ছবির প্রযোজক হিসেবে নাম রয়েছে সাঈদা কলিম ও অশোক ধানুকা। সেন্সর সার্টিফিকেটে অন্য নাম থাকলেও সবগুলো ছবির পোস্টারে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে প্রযোজনা ও পরিবেশনায় জাজ মাল্টিমিডিয়া। বিষয়টি সেন্সর আইনের সুস্পষ্ট লংঘন বলেই বিবেচিত। বরাবরই প্রতিষ্ঠানটি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সেন্সর বোর্ডে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোর্ডকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। কারণ পোস্টারের অনুমতি সেন্সর বোর্ডই দিয়ে থাকে।’
দলিল অনুযায়ী জাজ যেখানে কোনো ছবিরই মলিক নয় তাহলে কীভাবে পোস্টারে তারা প্রযোজক হিসেবে নিজেদের নাম প্রচার করে- এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ প্রযোজকরা। আইনের প্রতি তাদের এ অশ্রদ্ধা চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও বেশি হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ারই শামিল বলে মনে করেন কেউ কেউ। কারণ সেন্সর আইনে স্পষ্ট বলা আছে, ‘সেন্সর বোর্ডের অনুমোদিত যে কোনো পোস্টারে ছবির প্রযোজকের নাম লেখা থাকতে হবে।’
অথচ ‘অগ্নি টু’, ‘আশিকী’ এবং ‘অঙ্গার’ এসব ছবির পোস্টারে সেন্সর বোর্ডের আইন অমান্য করে প্রকৃত মালিকের নাম গোপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এত কিছুর পরও সেন্সর বোর্ড কেন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেটাই প্রশ্নসাপেক্ষ।
এ আইন না মানার ব্যাপারে জাজের কর্ণধার আবদুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আইন আছে বলে আমার জানা নেই এবং সেন্সর বোর্ড থেকেও লিখিত কিছু আমাকে দেয়া হয়নি।’
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ বিষয়ে এখনই সেন্সর বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহলে সাধারণ প্রযোজকদের কাছে বোর্ডের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকবে বলে তাদের অভিমত।