দলীয় ৪৯ রানের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন চলতি টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান জাকির আলী। সহজ ম্যাচ কঠিন হয়ে যাওয়ার ফলে এই চোট নিয়েই দ্বিতীয় দফা মাঠে নামতে হয় তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাটেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। জাকির যেন সেদিন ক্যারিবিয়ানদের কাছে হেরে তার প্রতিশোধ স্বরূপ স্প্রিংগারের রোল প্লে করলেন। প্রায় সেকেন্ড দশেকের মতো সেই নাচ দেখলো ফতুল্লার উপস্থিত দর্শকরা।
লঙ্কান যুবাদের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয়ে যুব বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানটি বাংলাদেশের। ফাইনাল খেলতে না পারার আক্ষেপ মেটাতে হচ্ছে এই তৃতীয় স্থান প্রাপ্তি দিয়েই। অবশ্য মিরাজদের জন্য এটাই কম কিসে! এখন পর্যন্ত এটাই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য।
শ্রীলঙ্কাকে ২১৪ রানে আটকে রেখেও ম্যাচটি সহজে জিততে না পারার পেছনে মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতা। ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৩ জনই হয়েছেন রান আউটের শিকার। দুই সর্বোচ্চ স্কোরার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত দুইজনেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান আউটের শিকার হয়েছেন।
পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও পিনাক ঘোষ এই ম্যাচে সুযোগ পাননি। ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্ব উঠেছিল জয়রাজ শেখ ও উইকেটরক্ষ ব্যাটসম্যান জাকির হাসানের কাঁধে। তবুও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির ভাগ্য বদলায়নি। জায়গা বদলে যেন নিজেকে হারিয়ে বসেন আগের কয়েক ম্যাচে দারুণ করা জাকির হাসান। কোনও রান না করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
তবে জয়রাজ ও প্রথমবারের মতো দলে সুযোগ পাওয়া জাকের আলী ভুলিয়ে দিয়েছেন জাকির হাসানের বিদায়ের কথা। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৩১ রানে। ৪৫ বলের ইনিংসে মেরেছেন পাঁচটি বাউন্ডারি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি ৬৬ বলে ৩ চার ও এক ছয়ে ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত ৪০, জয়রাজ শেখ ২৬, সাইফুল হায়াত হৃদয় ২০ ও সাইফউদ্দিন ১৯ রান করেছেন।
শ্রীলঙ্কান বোলারদের মধ্যে শাম্মু আশান সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া দামিথা সিলভা ও ফার্নান্দো একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। শুরুতেই সাবধানী থাকে তারা। সকালের শিশির আর বাংলাদেশের বোলারদের বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নেন দুই লঙ্কান ওপেনার কামিন্দু মেন্ডিস ও সালিন্দু উশান পেরেইরা। ১২ ওভারে দলের স্কোরকার্ডে ৬০ রান যোগ করে নেন এ দুজন। বাংলাদেশ যখন হন্যে হয়ে উইকেট খুঁজছে, তখই ত্রাতা হয়ে হাজির অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
৩৪ রান করা পেরেইরাকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশ যুব অধিনায়ক। ৩ রান পর বাকি ওপেনার মেন্ডিজকেও সাজঘর চেনালেন মিরাজ। দুই ওপেনারকে দ্রুত হারিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়ে যায় লঙ্কান যুবারা। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগালেন মিরাজ। আভিশকা ফার্নান্দোকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করে বিধ্বংসীই হয়ে উঠলেন ডানহাতি এই স্পিনার।
দারুণ শুরুর পর অনেকটা মুখ থুবড়েই পড়ে লঙ্কানদের ইনিংস। এখান থেকে লঙ্কানদের পথ দেখাতে শুরু করেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। পরের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেও পেয়েছেন সঙ্গ। তবে অন্যরা ইনিংস বড় করতে না পারলেও আসালাঙ্কা করেন ইনিংস বাঁচানো ৭৬ রান। তার ব্যাটেই ২০০ পেরোয় শ্রীলঙ্কা। শাম্মু আশান ২৭, বিষদ রাধিকা ১০ ও ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা ৩০ রান করলে ২১৪ রানে পৌঁছে ৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যাওয়া লঙ্কান যুবারা।
বোলারদের মধ্যে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মিরাজ একাই নিয়েছেন ৩টি উইকেট। তিনি ১০ ওভারে ২৮ রান খরচায় এই তিনটি উইকেট নিয়েছেন। সাইফ উদ্দিন ও আব্দুল হালিম ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা ও সালেহ আহমেদ শাওন।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ