বাংলাদেশের কৃষকদের সয়াবিন চাষের অভিজ্ঞতা না থাকলেও সরকার কৃষকদের আগ্রহী করতে চায়।এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা। গ্রামে গ্রামে কৃষকদের সয়াবিন চাষের ধারণা দিতে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেলো এ তথ্য।
আমদানি নির্ভর সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল বলে এর মূল্য নিয়ে তটস্থ থাকতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। এখন বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় নানা সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। মূলত এ কারণেই সয়াবিন উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে সরকার।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুসারে, সয়াবিন বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেলবীজ ফসল। বাংলাদেশে যা উৎপাদন হয় তা চাহিদার মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সয়াবিনের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে বিনাসয়াবিন-২।
জাতটি সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি উচ্চ ফলনশীল। গাছের উচ্চতা রবি মৌসুমে ২৭-৪০ সেন্টিমিটার এবং খরিফ মৌসুমে ৩৫-৪২ সেন্টিমিটার হয়। প্রাথমিক শাখা ৩-৫টি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৪০-৫০টি। বীজ আকারে মাঝারি ধরনের এবং ১০০ বীজের ওজন ১৩.০-১৩.৮ গ্রাম হয়। বীজে আমিষ, তেল ও শর্করার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩, ১৯ এবং ২৬ শতাংশ।
রবি এবং খরিফ মৌসুমে এ গাছের জীবনকাল যথাক্রমে ১১৫ এবং ১১৭ দিন। এ দুই মৌসুমে যথাক্রমে ২.৫-২.৮ এবং ২.৭-৩.৩ টন/হেক্টর ফলন পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল জানিয়েছেন, রবি এবং খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবিন চাষ করা যায়। বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ করা যায়। খরিফ মৌসুমের জন্য উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযোগ্য জমি এবং রবি মৌসুমের জন্য মাঝারি থেকে নিচু জমি নির্বাচন করতে হয়। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, যশোর, ময়মনসিংহের কিছু অঞ্চল সয়াবিন চাষের উপযোগী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ২ লাখ টন। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। উৎপাদিত তেলের মধ্যে সরিষা, তিল, তিসি উল্লেখযোগ্য। আমদানির মধ্যে সয়াবিন ও পাম তেলই প্রধান।
এর মধ্যে বেশি আমদানি হয় পাম তেল। যদিও এর সঙ্গে একমত নন অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানিকারকরা। তাদের ভাষ্য, চাহিদার ১৮ লাখ টন ভোজ্য তেলের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনা থেকে। বাকি পাম তেল আমদানি করা হয় মালয়েশিয়া থেকে।
সানবিডি/এনজে