যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আগামী এপ্রিলে তিনি ওয়াশিংটন যেতে পারেন। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি তিন দিনের ভারত সফরে যাচ্ছেন। চেন্নাইতে নবপ্রতিষ্ঠিত মিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াও দিল্লিতে দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি হচ্ছে। ওই সফরের জন্য মন্ত্রী মোমেনকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বাসসের রিপোর্ট মতে, মন্ত্রী মোমেন বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাকে বলেন, আজ সকালে আমি এ আমন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে এক বার্তায় এ আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মোমেন বলেন, ব্লিঙ্কেন গত ডিসেম্বরে এক ফোনালাপকালে এ বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
ওই সময় তিনি (ব্লিঙ্কেন) বলেছিলেন, বসন্তে ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি তাঁর সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে মিলিত হতে চান।
ঢাকায় এ উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বার্তায় আরও বলা হয়, আব্দুল মোমেনের সুবিধা ও সম্মতি সাপেক্ষে আগামী ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে ব্লিঙ্কেন তাঁর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। ১৯৭২ সালের ৪ঠা এপ্রিল তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ দূতাবাসে যৌথভাবে ঐতিহাসিক দিনটি উদ্যাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে ব্লিঙ্কেনও অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, এই বার্ষিকী উদ্যাপনের সঙ্গে একগুচ্ছ আয়োজনেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছরে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশি এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসি সফরের জন্য আব্দুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এ ইস্যু (নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ হচ্ছে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করে ব্লিঙ্কেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ৭৩ জন মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাঁরা পররাষ্ট্রবিষয়ক বিভিন্ন কংগ্রেস কমিটির সদস্য।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসভিত্তিক কর্মকর্তারা কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে বলেছিলেন, ওয়াশিংটন আগামী ৫০ বছরে বস্তুত বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী ও বড় ধরনের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
ভারত যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব
ওদিকে আগামী ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ভারত যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সফরকালে দিল্লির বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে তার। গত বছরের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন ঢাকা সফরে এসে সচিবকে আমন্ত্রণ জানান।
জানা যায়, এ সফরের প্রথম দিন ভারতের চেন্নাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন উদ্বোধন করবেন মাসুদ বিন মোমেন। এর পরদিন নয়াদিল্লি যাবেন সচিব। সেখানে শ্রিংলা-মোমেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের এ সফরে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ঢাকা ও নয়া দিল্লির আসন্ন যৌথ কনসালটেটিভ কমিশন (জেসিসি) বৈঠক নিয়েও আলোচনা হবে।
সফর শেষে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের ফেরার কথা রয়েছে মাসুদ বিন মোমেন। গত বছরের বছরের শেষ মাসে ঢাকা সফর করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
সানবিডি/এনজে